নাসিরনগর,ব্রাহ্মণবাড়িয়াঃ
ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার আলোচিত রোশন হত্যাকান্ডের প্রধান আসামী আলফাজ মিয়া (৩২)কে নাসিরনগর থানা পুলিশ ২৯ মার্চ রাতে গ্রেফতার করেছে।
চলতি বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারী রাতে উপজেলা সদর হতে মাত্র ২ কি: মি: দূরে রোশন মিয়া (৪০) তার নিজ বাড়িতে ডাকাতের হামলায় গুরুতর আহত হয়। পরদিন ২৮ ফেব্রুয়ারী ঢাকার পদ্মা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়।
তার মৃত্যু জনিত ঘটনা সংবাদপত্র ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জন্ম দেয় নানা ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার। উপজেলার নুরপুর গ্রামের পুকুরপাড় এলাকার হিরন মিয়ার ছেলে রোশন মিয়া (৪০) নাসিরনগর সদর ও ফুলপুর গ্রামের মাঝামাঝি রাস্তার পাশে বড়ভাঙ্গা নামক স্থানে বাড়ি তৈরী করে বসবাস করছে প্রায় ১০ বছর যাবত। গত ৪/৫ মাস আগে অপ্রকাশিত কোন লেনদেন নিয়ে রোশন প্রকাশ্যে দন্দ্ব হয় কাহেতুড়া গ্রামের মৃত:আ. জাহির মিয়ার ছেলে আলফাজ মিয়ার সাথে। বাক-বিতন্ডার এক পর্যায়ে ২জনই একজনকে আরেকজন ডাকাত সম্বোধন করে গালিগালাজ করে মারমুখী ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে এলাকাবাসী ২জনকে ধরে নিয়ে যান উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও গোকর্ন ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এমএ হান্নান মিয়ার কাছে, জড়ো হতে থাকে এলাকার লোকজন। সমস্থ ঘটনা শুনে বিএনপির সভাপতি এম এ হান্নান দুই জনকেই সোপর্দ করে পুলিশের কাছে। ওই ঘটনায় ১৪/১৫ দিন জেল খেটে বেড়িয়ে আসে রোশন। অন্যদিকে আলফাজ জেল খেটেছে প্রায় তিন মাস। আলফাজ গ্রেফতার হওয়ার জন্য প্রকাশ্যে দায়ী করে রোশনকে, উপস্থিত লোকজনের সামনেই আলফাজ ঘোষনা দিয়েছিল,এর প্রতিশোধ নেওয়ার কথা । এরপর ২৭ ফেব্রুয়ারী রাত প্রায় ১টায় ৮/১০ জন সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্র হামলা চালায় রোশনের বাড়িতে। রোশনকে কুচ (বর্শা ) দিয়ে মাথার এদিক -ওদিক ছিদ্র করে বেঁধে রাখে খাটের পায়ার সাথে। মারধর করে একই ভাবে বেঁধে তার স্ত্রী ও ছোটছোট ৪ মেয়ে এবং ৩ ছেলেকে। লুটে নিয়ে যায় ৪টি গরু, স্ত্রীর স্বর্নালংকার ও সকল ঘরের যাবতীয় মালামাল। রাত প্রায় ২টার দিকে ডাকাতদল চলে গেলে রোশনের স্ত্রী আছমা আক্তার ও সন্তানদের চিৎকারে ছুটে যান একটু দুরে বসবাস করা প্রতিবেশী রবিউল মিয়া ও রোশনের ভাই মালেক মিয়া। রোশনের স্ত্রী আছমা আক্তার বলেন, আমি চিনে ফেলেছি আলফাজই আমার স্বামীর হত্যাকারি, সে দলবল নিয়ে খুন করেছে আমার স্বামীকে। গুরুতর আহত রোশনকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকার পদ্মা জেলারেল হাসপাতালে। সেখানে ২৮ফেব্রুয়ারী রাত ১ টায় মারা যায় রোশন। ১ লা মার্চ লাশ নিয়ে আসা হলে খবর পেয়ে ঘটনা স্থলে যায় নাসির নগর থানা পুলিশ এবং ময়নাতদন্তের জন্য লাশ প্রেরন করেন ব্রাহ্মনবাড়িয়া সদর হাসপাতালে। ২মার্চ রোশনের স্ত্রী আসমা আক্তার আলফাজ মিয়া, আশুরাইল গ্রামের আমিন মিয়া সহ অজ্ঞাতনামা ৮/১০ জনকে আসামী করে পূর্বশত্রুতার জের উল্লেখ করে নাসিরনগর থানায় ১টি হত্যা ও ডাকাতির মামালা দায়ের করেন ।মামলাটির তদন্ত করছেন সাব ইন্সপেক্টর শ্রী চম্পক চক্রবর্তী। ঘটনার প্রায় ১মাস পর গত ২৯ মার্চ গভীর রাতে নাসিরনগর থানার এসআই (নিরস্ত্র) চম্পক চক্রবর্তী নেতৃত্বে একটি টিম মামলার প্রধান হত্যাকারি ও ১ নং আসামী আলফাজকে গ্রেফতার করেছে কাহেতুরা গ্রামের তার নিজ বাড়ি থেকে। আলফাজের বিরুদ্ধে নাসিরনগর থানায় ১ টি ডাকাতি, ১ টি চুরি, ১ মাদক, ১ টি হত্যা মামলা সহ মোট ০৪ টি মামলা রয়েছে।
এবং একই মামলার আসামি ও হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত মোহাম্মদ কুদ্দুস মিয়া (৬২), পিতা -মৃত আব্দুল জলিল, গ্রাম – কলিকুন্ডা, থানা নাসিরনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া কে গত ২ এপ্রিল রবিবার গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করেছে পুলিশ । কুদ্দুসেে বিরুদ্ধে নাসিরনগর থানায় ৩ টি গরু চুরির মামলা ও সরাইল থানায় ১ টি গরু চুরির মামলা রয়েছে। সে দীর্ঘদিন যাবত চোরাই গরু ক্রয় বিক্রয়ের সাথে জড়িত।
নাসিরনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মো: খাইরুল আলম জানান, আলফাজ ও কুদ্দুসকে গ্রেফতার করা হয়েছে, বাকীদেরও গ্রেফতারের পক্রিয়া চলমান।
এলাকাবাসী সকলের সহযোগিতা চাই ,কোন অপরাধীই ছাড়া পাবেনা ইনশাল্লাহ।
Leave a Reply