স্টাফ রিপোর্টার:
একটা ছাদখোলা বাসে তাদের বরন করে নেয়া হলো। এই জয়ে আসলে কাদের ভূমিকা আছে? আমরা কি জানি তাদের এই অর্জনের পেছনে কারা আসলে অনুপ্রেরনা হিসেবে কাজ করেছে? এই জয় আসলে কাকে উৎসর্গ করা উচিত?
এই জয় ২০১৮ সালের অনূর্ধ্ব ১৬ সাফ চ্যাম্পিয়নের খেলোয়ার রাজিয়া খাতুনকে উৎসর্গ করি, যিনি সন্তান প্রসবের ৫ ঘন্টা পর অতিরিক্ত রক্তপাতে চিকিৎসার অবহেলার কারনে মৃত্যুবরন করেন।
এই জয় আনুচিং মগিনীকে উৎসর্গ করি যিনি ২০১৮ এর চ্যাম্পিয়ন দলে ভালো খেলার পরও অজানা কারনে পরবর্তীতে দল থেকে বাদ পড়ে যান।
এই জয় উৎসর্গ করি গত বছর সংসার করতে অবসর নেয়া জাতীয় দলের হয়ে ২০২২ সাফ জয়ী ২২ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড সিরাত জাহান স্বপ্না যিনি সে আসরে ৪ গোল করেছিলেন।
এই জয় উৎসর্গ করি চীনে ফুটবল খেলতে যাওয়া ডিফেন্ডার সিরাজগন্জের আঁখি খাতুনকে যে মা সুস্থ্য হলেই খেলায় ফিরবে বলে এখনও ফেরা হয়নি।
এই জয় উৎসর্গ করি রুপা আক্তার, মিসরাত জাহান মৌসুমী, সাজিদা খাতুনকে, যাদের ইনজুরির দায়িত্ব বাফুফে নিতে পারেনি বলে তাদের আর খেলা হয়নি।
এই জয় উৎসর্গ করি কুড়িগ্রাম ভুরুঙ্গামারী ও নওগার স্বরলিকা ও তাসমিনা সহ আরো পনেরো জনের অধিক দাপুটে ফুটবলারকে যারা করোনাকালীন সময়ে অভাব ও অনিশ্চয়তায় একে একে বাল্যবিবাহের স্বীকার হয়েছে।
এই জয় উৎসর্গ করি গারো পাহারের কোলে কলসিন্দুরের ৮ জন খেলোয়ারকে যারা ২০২২ সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশে এসে লোকাল বাসে গ্রামের বাড়ি ফিরেছিলো।
এই জয় উৎসর্গ করি হাফ প্যান্ট পড়ে ফুটবল খেলার কারনে আক্রমনের স্বীকার খুলনার সাদিয়া নাসরিনকে।
এই জয় উৎসর্গ করি সাবিনা খাতুনকে যে বিনা চিকিৎসায় মাত্র তিন দিনের অসুস্থতায় মারা যান।
এই জয় উৎসর্গ করি পরের জমিতে দিনমজুরের কাজ করে বুট কিনে ফুটবল খেলার নেশায় বুদ হয়ে থাকা কিশোরীকে।
আমরা জয়ের আনন্দে অংশীদার হই। ছাদখোলা বাস দেখে উল্লাস করি। পরাজয়ের কাহিনি শুরু না হতে পাতা উল্টাই। আর আমাদের মেয়েরা জয়ের জন্যে শুধু নব্বই মিনিট না, জীবনের প্রতি দিন, প্রতি বেলা সংগ্রাম করে যায় একটা গোলের জন্যে যার আগে পিছে আমাদের কোনো ভূমিকাই নেই।
আমাদের প্রায় প্রতিটা নারী ফুটবলার উঠে এসেছে বাংলাদেশের গ্রামগঞ্জ, পাহাড়, চর এলাকা থেকে যেখানে অনুকূলতা নামে কোনো শব্দ নেই। এদের অনুপ্রেরণা এরা স্বয়ং এবং আজকের এই সাফল্য কোনো কাকতালীয়তা নয়। এর পেছনে মেয়েদের দীর্ঘ দিনের সংগ্রাম আছে, অভিমান, অভিযোগ থেকে তৈরি হওয়া তীব্র জেদ আছে, দেশপ্রেম আছে। আমাদের কোনো প্রাপ্তি ত্যাগহীন না।
অভিনন্দন বাঘিনীরা!
তোমরা অদম্য যোদ্ধা!
তথ্য সহযোগীতায়: রবিউল ইসলাম
Leave a Reply