দিনাজপুর জেলা প্রতিনিধি:
পরীক্ষামূলকভাবে মতো রঙিন ফুলকপি চাষ করে সফলতা পেয়েছে দিনাজপুরের বীরগঞ্জে কৃষকরা। ভালো ফলনের পাশাপাশি ফুলকপির ভালো দামও পাচ্ছেন তারা। ফলে রঙিন ফুলকপি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন স্থানীয় সবজি চাষিরা।
রঙিন ফুলকপির সাফল্যে খুশি স্থানীয় কৃষি বিভাগও। উপজেলার নিজপাড়া, ভোগনগর ও সাতোর ইউনিয়নের রঙিন ফুলকপি চাষিরা বলছেন, সাদা কপি ৫ টাকায় বিক্রি হলেও এ কপি এখনো ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে পিস।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে আগেই রঙিন ফুলকপি চাষ শুরু হয়েছে। উপজেলার নিজপাড়া ইউনিয়নের দামাইক্ষেত্র গ্রামের সবজি চাষি কুশল চন্দ্র রায় ২০ শতাংশ জমিতে চাষ করা হয়।
শনিবার দুপুরে ওই গ্রামে খেত ঘুরে দেখা যায়, চাষ করা হলুদ, গোলাপি ও হালকা লাল রঙের বাহারি ফুলকপি এখন শোভা পাচ্ছে জমির প্রতিটি কোণে। যা শুধু দৃশ্যমান সৌন্দর্যই বাড়ায়নি, বাজারেও এনেছে বিপুল সাড়া।
তিনি পরীক্ষামূলকভাবে প্রথমবারের মতো রঙিন ফুলকপি চাষ করে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছেন। চারা ছাড়াও ফুলকপি চাষের জন্য প্রয়োজনীয় জৈব সার, কীটনাশক ও পরামর্শ দিয়ে তাকে সহযোগিতা করেছে উপজেলা কৃষি অফিস।
উৎপাদন খরচ কৃষি অফিস বহন করলেও বাজারের বিপুল চাহিদা কুশল চন্দ্র রায়ের মতো ভোগনগর ও সাতোর ইউনিয়নের আরও চারজন রঙিন ফুলকপি ও বাঁধাফুলকপি চাষিদের এনে দিয়েছে সাফল্যের স্বাদ। সাদা ফুলকপি যেখানে বিক্রি হয় প্রতিপিস ৪-৫ টাকায়, সেখানে তার চাষ করা রঙিন ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকায়। ইতোমধ্যেই ৭ হাজার টাকার ফুলকপি বিক্রি করেছেন কুশল।
তিনি আশা করছেন, বাকি ফসল থেকে ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা আয় করবেন। ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে চাষ করার পরিকল্পনাও রয়েছে তার। কৃষি অফিসের পরামর্শ অনুযায়ী কুশল চন্দ্র রায় জৈব পদ্ধতিতে চাষ করেছেন এই রঙিন ফুলকপি। পোকামাকড় দমনের জন্য ব্যবহার করেছেন হলুদ ফাঁদ, যা কপিগুলোকে করেছে স্বাস্থ্যকর এবং বিষমুক্ত। বাজারে রঙিন ফুলকপি আসতেই সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক চাহিদা।
বীরগঞ্জ পৌর বাজারের সবজি ব্যবসায়ী মো. মোজাম্মেল জানান, এ কপির পুষ্টি এবং গুনাগুন অনেক ভালো। রঙিন ফুলকপি বাজারে আসা মাত্রই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। দামও মিলছে আশানুরূপ।
তিনি বলেন, কৃষকরা যদি এই চাষ আরও বাড়ান, তবে এটি হয়ে উঠবে অত্যন্ত লাভজনক একটি ফসল। স্থানীয় ক্রেতা আশারুল বলেন, ক্ষেত থেকে ২০ টাকা দরে রঙিন ফুলকপি কিনেছেন তিনি। দেখতে যেমন আকর্ষণীয়, খেতেও তেমনি সুস্বাদু।
বীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো.শরিফুল ইসলাম জানান, পরীক্ষামূলক এই চাষে কৃষকরা আশানুরূপ ফলন ও বাজারমূল্য পেয়েছেন। রঙিন ফুলকপির পুষ্টিগুণ সাদা ফুলকপির তুলনায় অনেক বেশি এবং এতে রয়েছে উচ্চমাত্রার অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। তিনি আরও জানান, এ বছর উপজেলায় ৭০২ হেক্টর জমিতে ফুলকপি চাষ হয়েছে এবং এর মধ্যে এক একর জমিতে রঙিন ফুলকপি চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বাজারে এর উচ্চ চাহিদা থাকায় আগামী বছর আরও বেশি কৃষক এই চাষে যুক্ত হবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
Leave a Reply