মোঃ শাহজাহান বাশার:
দেশের চলমান রাজনৈতিক, সামাজিক ও প্রশাসনিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে সচেতন নাগরিক সমাজ, বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী এবং অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে—যদি সরকারি আমলা ও গণমাধ্যমকর্মীরা কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে পড়েন, তবে তা দেশের জন্য অশুভ ও ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। তারা মনে করেন, রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা, প্রশাসনিক ন্যায়বিচার ও সংবাদমাধ্যমের নিরপেক্ষতা হারালে গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং আইনের শাসন চরম হুমকির মুখে পড়বে।
সাবেক ক্যাবিনেট সচিব ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিশ্লেষক ড. মাহমুদুল হাসান বলেন, “সরকারি আমলা মানেই রাষ্ট্রের চাকর। তার রাজনৈতিক কোনো পরিচয় থাকা অনৈতিক ও সাংবিধানিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। একইভাবে, একজন সাংবাদিক যদি সত্যের বদলে রাজনৈতিক স্বার্থে কলম চালান, তাহলে সেটি সংবাদ নয়, প্রোপাগান্ডা হয়ে দাঁড়ায়।”
বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেখা যাচ্ছে, কিছু আমলা ও সাংবাদিক বিভিন্ন দলের সরাসরি বা পরোক্ষ স্বার্থে কাজ করছেন—কখনো সরকারি দলকে রক্ষা করতে গিয়ে আইন বা নিয়মনীতির ব্যত্যয় ঘটাচ্ছেন, আবার কখনো বিরোধী পক্ষকে আক্রমণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছেন। এর ফলে জনগণের মধ্যে প্রশাসন ও সংবাদমাধ্যমের উপর আস্থা কমে যাচ্ছে।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও প্রবীণ সাংবাদিক মো. শহীদুল ইসলাম জানান, “আমরা বহু বছর ধরে দেখি, কিছু সাংবাদিক তাদের দায়িত্ব ভুলে গিয়ে বিশেষ দলের প্রতি অনুগত হয়ে পড়েন। এর ফলে সৎ সাংবাদিকরা বিব্রত হন, এবং গণমাধ্যমের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়।”
অপরদিকে, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) নামক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “আমলারা যদি দলীয় রাজনীতির বাইরে থেকে কাজ না করেন, তাহলে প্রশাসন পক্ষপাতমূলক হয়ে পড়ে। এতে সাধারণ মানুষ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হন।”
অনেকেই মনে করেন, সরকারি আমলাদের দলমতনিরপেক্ষভাবে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করা উচিত। তাদের কাজ হওয়া উচিত জনগণের সেবা নিশ্চিত করা, কোনো রাজনৈতিক দলের এজেন্ট হিসেবে নয়। একইভাবে, সাংবাদিকদের উচিত সত্য, বস্তুনিষ্ঠতা ও জনস্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে সংবাদ পরিবেশন করা, কোনো পক্ষকে খুশি করার জন্য নয়।
বিশ্লেষকরা বলেন, এই অবস্থা চলতে থাকলে দেশের প্রশাসনিক কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়বে, সাংবাদিকতার মর্যাদা ক্ষুণ্ন হবে এবং সর্বোপরি দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা থমকে যাবে।
এ বিষয়ে সাধারণ নাগরিকরাও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তরুণ উদ্যোক্তা সুমন হোসেন বলেন, “সংবাদে সত্য যদি না থাকে, আর আমলারা দলীয় হয়ে পড়ে, তাহলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে?”
দেশের সর্বস্তরে একটি শক্তিশালী, নিরপেক্ষ ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসন এবং বিশ্বাসযোগ্য সংবাদমাধ্যম গড়ে তোলাই সময়ের দাবি। সরকার, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং নাগরিক সমাজকে এ বিষয়ে একসাথে কাজ করতে হবে। নতুবা দেশ এক ভয়ঙ্কর সামাজিক ও রাজনৈতিক বিপর্যয়ের দিকে ধাবিত হতে পারে, যার খেসারত দিতে হবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে।
Leave a Reply