গোলাম আলী নাইম ঢাকা বিশেষ প্রতিনিধি:
আল্টিমেটাম দেয়া সত্ত্বেও ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের ৯ম-১০ম শ্রেণীর ‘বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি’ বই থেকে বিতর্কিত ও রাষ্ট্রদ্রোহী পরিভাষা ‘আদিবাসী’ শব্দ প্রত্যাহার না করায় ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)’ ঘেরাও করে বিক্ষোভ করছে সার্বভৌমত্ব রক্ষায় প্রতিষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’।
পরিমার্জন কমিটিতে থাকা আরেক জাফর ইকবাল ধর্মহীন রাখাল রাহা ওরফে সাজ্জাদকে এখনই অপসারণের ঘোষণা এবং পাঠ্যপুস্তকে ‘আদিবাসী’ শব্দ অন্তর্ভুক্তি অনুমোদন করায় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান ও এর সাথে যোগসাজস থাকা কর্মকর্তাদের পদত্যাগসহ আন্দোলনকারীদের দেয়া ৫ দফা দাবী বাস্তবায়নে সরকারি ঘোষণা না আসলে ঘেরাও কর্মসূচী অব্যাহত রাখার হুশিয়ারী দিয়েছে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এজন্য তদন্ত কমিটি গঠন ও জড়িতদের অপসারণসহ শাস্তি দাবী করেছে সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ।
‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’র ৫ দফা হচ্ছে-
১. পাঠ্যপুস্তক থেকে রাষ্ট্রদ্রোহী ‘আদিবাসী’ শব্দ প্রত্যাহার, অখণ্ড ভারতের কল্পিত মানচিত্রের সব ধর্মীয় গাছের ছবি মুছে ফেলা, পরিমার্জন কমিটিতে থাকা দেশীয় মূল্যবোধবিরোধী ধর্মহীন রাখাল রাহা ওরফে সাজ্জাদকে অপসারণ, ‘আদিবাসী’ শব্দ অন্তর্ভুক্তি অনুমোদন করায় এনসিটিবির চেয়ারম্যান ও এর সাথে যোগসাজস থাকা কর্মকর্তাদের পদত্যাগ এবং তদন্ত কমিটির মাধ্যমে পাঠ্যপুস্তকে ‘আদিবাসী’ শব্দ প্রবেশ করানোর সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে তাদের অপসারণ ও শাস্তির আওতায় আনতে হবে,
২. অবাঙালিদেরকে (ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী) আদিবাসী সম্বোধন করে কোন বক্তব্য দেওয়া যাবে না, কোন বই-পুস্তক ছাপানো যাবেনা, লেখালেখি করা যাবে না, কোন নাটক সিনেমা বা গল্প-কাহিনী রচনা করা যাবে না। বাঙালিদেরকেই বাংলাদেশের একমাত্র আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি থাকতে হবে।
৩. ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদেরকে (অবাঙালি) ‘আদিবাসী’ বলা ও প্রচারণাকে রাষ্ট্রদ্রোহী অপরাধ হিসেবে ঘোষণা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারী করতে হবে,
৪. শিক্ষার কথিত মানোন্নয়নের নামে দেশের শিক্ষাখাতে আন্তর্জাতিক সংস্থা বা এনজিও থেকে তহবিল নেয়া বন্ধ করতে হবে এবং বৈদেশিক তহবিলের নামে শিক্ষা কারিকুলামকে সাম্রাজ্যবাদীদের হাতে তুলে দিয়ে আমাদের শিক্ষার্থীদের মগজ বিক্রী করা যাবে না,
৫. দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে ‘শিক্ষানীতি, শিক্ষাক্রম, পাঠ্যক্রম এবং পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন ও পরিমার্জনে বিদেশী সংস্থা বা তাদের দ্বারা প্রভাবিত ব্যক্তিদের থেকে শতভাগ প্রভাবমুক্ত করতে হবে। এক্ষেত্রে ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’র পরামর্শ ও প্রতিনিধিত্ব রাখতে হবে।
বিক্ষোভ ও ঘেরাও কর্মসূচিতে স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক মুহম্মদ জিয়াউল হক জিয়া বলেন, গত ৮ জানুয়ারি, ২০২৫ আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির সংবাদ সম্মেলন থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিকট ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পাঠ্যপুস্তক থেকে বিতর্কিত ও সার্বভৌমত্ববিরোধী ‘আদিবাসী’ শব্দটি প্রত্যাহারের ঘোষণা চেয়েছিলাম। কিন্তু মন্ত্রণালয় আমাদেরকে হতাশ করেছে। তাই দেশের স্বার্থে, দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার স্বার্থে এনসিটিবি ঘেরাও করতে বাধ্য হয়েছি।
মুহম্মদ জিয়াউল হক জিয়া তার বক্তব্যে বলেন, নতুন বছরের স্কুল ও মাদ্রাসার নবম-দশম শ্রেণীর বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি’ বইতে ‘আদিবাসী’ শব্দ সংযোজন খুবই আপত্তিকর, অনাকাঙ্ক্ষিত, সংবিধান বিরাধী ও রাষ্ট্রদ্রোহী কর্ম, যা বিচ্ছিন্নতাবাদের পথ সহজ করবে। কারণ বাংলাদেশে একমাত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং তাদের দেশী-বিদেশী পৃষ্ঠপোষক ও দোসররাই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদেরকে ‘আদিবাসী’ বলে প্রচারণা চালায় ও স্বীকৃতি চায়। তাদের এই প্রচারণা ও স্বীকৃতি চাওয়ার পেছনে আলাদা রাষ্ট্র গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে। ছলে-বলে-কৌশলে তাই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদেরকে দেশে ‘আদিবাসী’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে নতুন একটি তথাকথিত স্বাধীন রাষ্ট্র ‘জুম্মল্যান্ড’ তৈরীর পথ সহজ হবে! জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে (এনসিটিবি) বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সেই পৃষ্ঠপোষক ও দোসররাই ‘আদিবাসী’ শব্দটি বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করেছে। সরকারকে একটি তদন্ত কমিটি করে অতিদ্রুত এদেরকে চিহ্নিত করে অপসারণ করতে হবে এবং শাস্তির আওতায় আনতে হবে। এরা দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার জন্য হুমকী!
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সংবিধানের ২৩ক অনুচ্ছেদে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদেরকে উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা ও নৃ-গোষ্ঠী বলা হয়েছে। এছাড়া, বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় ২০২২ সালের ১৯ জুলাই এক বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশে ‘আদিবাসী’ শব্দটি ব্যবহার না করার বিষয়ে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা মেনে চলার নির্দেশনা দেয়। ২০১৯ সালের এক প্রজ্ঞাপনেও ‘আদিবাসী’ শব্দটি ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়। কিন্তু সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা ও সরকারি নির্দেশনা অগ্রাহ্য ও উপেক্ষা করে দেশী-বিদেশী একটা শ্রেণী দেদারসে বিচ্ছিন্নতাবাদী পরিভাষা ‘আদিবাসী’ শব্দটি ব্যবহার ও প্রচার করে যাচ্ছে।
বাংলাদেশে ২০০৭ সালের পর থেকে এই প্রচারণা ব্যাপকভাবে চলছে। এর কারণ হচ্ছে- ২০০৭ সালে জাতিসংঘের ৬১তম অধিবেশনে আদিবাসী বিষয়ক একটি ঘোষণাপত্র উপস্থাপন করা হয়, যার নাম “United Nations Declaration on the Rights of Indigenous Peoples.” বিশ্বব্যাপী বিতর্কিত আদিবাসী বিষয়ক জাতিসংঘের এই ঘোষণাপত্রে এমন কিছু বিতর্কিত অনুচ্ছেদ রয়েছে যেগুলো বাস্তবায়ন করতে গেলে আদিবাসী অঞ্চলের উপর রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রন ও অখণ্ডতা থাকে না। দেশে কোনো উপজাতীয় আদিবাসী না থাকায় বাংলাদেশ এ্ই ঘোষণাপত্রে তাই স্বাক্ষর করেনি। এই ঘোষণাপত্রের কয়েকটি বিতর্কিত গুরুত্বপূর্ণ অনুচ্ছেদ হচ্ছে-
ক. আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার (Self-determination) (অনুচ্ছেদ ৪)
খ. স্বায়ত্তশাসন ও নিজস্ব সরকার গঠনের অধিকার, (অনুচ্ছেদ ৪)
গ. আলাদা জাতীয়তার অধিকার, (অনুচ্ছেদ ৬),
ঘ. সেনাবাহিনী উচ্ছেদের অধিকার, (অনুচ্ছেদ ৩০),
ঙ. ভূমির মালিকানা, ভূমির সীমানা নির্ধারণ ও এর সম্পদের অধিকার (অনুচ্ছেদ ২৬) এবং এই ভূমির কৌশল নির্ধারণেরও অধিকার থাকবে তাদের ((অনুচ্ছেদ ৩২)
চ. দেশী-বিদেশী আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা পাওয়ার অধিকার (অনুচ্ছেদ- ৩৯)
ছ. জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ (অনুচ্ছেদ ৪২) ।
উপরের অনুচ্ছেদগুলো যদি রাষ্ট্র মেনে নেয় তাহলে আদিবাসী ও তাদের ভূমি এবং তাদের ইচ্ছার উপর রাষ্ট্রের কোনো নিয়ন্ত্রন থাকে না। আদিবাসীদেরকে এখানে এমন এক ধরণের সুপার রাইটস বা অতি অধিকার দেয়া হয়েছে যা রাষ্ট্রের অন্য নাগরিকদের দেয়া হয়নি। এই অতি অধিকার ও স্বশাসন -এর শেষ পরিণতি হচ্ছে ইন্দোনেশিয়া ভেঙ্গে পূর্ব-তিমূর ও সুদান ভেঙ্গে দক্ষিণ সুদানের মত আলাদা রাষ্ট্র গঠন।
জিয়াউল হক বলেন, বিতর্কিত হলেও জাতিসংঘের ঘোষণাপত্রে বর্ণিত বিষয়গুলো শুধু আদিবাসীদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কিংবা উপজাতিদের ক্ষেত্রে নয়। এই কারণেই বাংলাদেশের বিচ্ছিন্নতাবাদী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরা এবং তাদের দেশী-বিদেশী পৃষ্ঠপোষক রাষ্ট্র, সংস্থা, এনজিও ও বেতনভুক্ত দোসররা ‘আদিবাসী’ প্রচারণা ও স্বীকৃতির মাধ্যমে একটা আন্তর্জাতিক আইনী বৈধতা (লেজিটিমেসি) পেতে চায়। এবং এর মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে ব্যাপক দাঙ্গা সৃষ্টি করে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপে পূর্ব তিমুর ও দক্ষিণ সুদানের মত তথাকথিত স্বাধীন ‘জুম্মল্যান্ড’ নামে একটি আলাদা রাষ্ট্র গঠন করাই তাদের মূল লক্ষ্য।
সমাবেশে স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টির যুগ্ম আহ্বায়ক ও ঢাবি শিক্ষার্থী মুহিউদ্দীন রাহাত বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরা বিদেশী প্ররোচণায় ২০০৭ সাল থেকে নিজেদেরকে আদিবাসী দাবী করলেও তাদের দাবী চরম ভণ্ডামী, জালিয়াতী ও মিথ্যা। ইতিহাস ও নৃ-তত্ত্ব অনুযায়ী- পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের আদি নিবাস হচ্ছে পার্শ্ববর্তী মিয়ানমার, ভারত, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড ইত্যাদি রাষ্ট্রসমূহ। তারা ওখানকার আদিবাসী বা আদি বাসিন্দা, বাংলাদেশের নয়। বাংলাদেশে তাদের মধ্যে একটা অংশ দখলদার (সেটেলার) যারা দস্যুবৃত্তি করতে করতে অবৈধভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রবেশ করে জোরপূর্বক বাঙ্গালীদের ভূমি দখল করে বসতী শুরু করেছিল। আরেকটা অংশ আশপাশের অঞ্চল থেকে নিপীড়নের শিকার হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে শরনার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছিল।
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের এই উভয় শ্রেণি-ই বাংলাদেশের আদিম কিংবা প্রকৃত অধিবাসী নয়। তাদেরকে 'আদিবাসী' বলে প্রচার করা মানে একটি ঐতিহাসিক ও নৃতাত্ত্বিক সত্যকে অস্বীকার করা; যে প্রচারণার পেছনে আমেরিকা, ভারত, মিয়ানমার, খ্রিস্টান মিশনারি ও বিভিন্ন দেশি-বিদেশি এনজিওর যৌথ মদদ ও ফান্ডিং রয়েছে। এছাড়া তাদের বেতনভুক্ত কিছু দেশীয় তথাকথিত সুশীলও রয়েছে। যাদের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে আলাদা রাষ্ট্র গঠন করা। ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’ তাদের এহেন অবৈধ খায়েশ পূরণ হতে দিতে পারে না, দিবে না। ইনশায়াল্লাহ!
আমরা দেশবাসীকে এই ব্যাপারে সচেতন হওয়ার অনুরোধ করছি এবং আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষায় পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে ষড়যন্ত্রকারীদেরকে সম্মিলিতভাবে রুখে দেবার আহবান জানাচ্ছি।
অতএব, আমাদের উপরোক্ত ৫ দফা দাবী সরকারকে বাস্তবায়নের অঙ্গীকার দিতে হবে। নইলে আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে। ইনশায়াল্লাহ!
প্রধান উপদেষ্টাঃ মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম খান,অবসরপ্রাপ্ত সেনা সার্জেন্ট।। সম্মানিত উপদেষ্টাঃ সিনিয়র সাংবাদিক মোঃ আমজাদ হোসেন রতন ।। সিনিয়র সাংবাদিকঃ ডা.এম এ মান্নান ।। সম্পাদক ও প্রকাশক: মোঃ রেজাউল করিম ।। নির্বাহী সম্পাদক: মোঃ সোলায়মান হোসাইন ।। বার্তা সম্পাদকঃ জাকারিয়া আল ফয়সাল।
যোগাযোগঃঠিকানা: হাসেম মার্কেট, কুরগাও, নবীনগর, আশুলিয়া, সাভার, ঢাকা 1216। রোড নাম্বার 733 হো নাম্বার 805 ফোন: +65 8541 3954, 01894589037,মেইল:dailynewsbangla24info@gmail.com
Copyright ©️ 2024 in Daily News Bangla 24