রফিকুল ইসলাম রফিক, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
কুড়িগ্রামে তথ্য সংগ্রহের সময় সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলম সাদ্দামের মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়েছে পুলিশ। এসময় ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশ সুপার (এসপি) মাহফুজুর রহমান ওই সাংবাদিককে উদ্দেশ করে বলেন, ‘মিডিয়া ছুটাই দেব, চেনো আমাদের!’ বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) রাত ১০টার দিকে জেলার চিলমারী উপজেলায় এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৃহস্পতিবার সকালে চিলমারীর দক্ষিণ খরইয়া গ্রাম ও সুন্দরগঞ্জ শহরের মোড় গ্রামের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এরপর রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন কুড়িগ্রামের পুলিশ সুপার (এসপি) মাহফুজুর রহমান। এ সময় স্বদেশ প্রতিদিন পত্রিকার চিলমারী প্রতিনিধি জাহাঙ্গীর আলম সাদ্দাম ছবি এবং ভিডিও ধারণ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশ সুপার ওই সাংবাদিকের ফোন কেড়ে নেওয়ার নির্দেশ দেন। একপর্যায়ে পুলিশ সদস্য ওই সাংবাদিকের ফোন কেড়ে নিয়ে ধারণ করা ভিডিও ও ছবি ডিলিট করে দেন।এরপর ওই সাংবাদিককে উদ্দেশ করে এসপি বলেন, ‘মিডিয়া ছুটাই দেব, চেনো আমাদের!’
ভুক্তভোগী সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ঘটনাস্থলে পুলিশ সুপার আসার খবরে সেখানে যাই। ভিডিও ও ছবি তোলার সময় এসপি আমার ওপর চড়াও হন। সংবাদকর্মী পরিচয় পেয়ে আরো ক্ষিপ্ত হয়ে আমার হাতে থাকা ফোনটি কেড়ে নিতে বলেন। পুলিশ সদস্য ফোনটি কেড়ে নিয়ে ছবি ও ভিডিও ডিলিট করেন।
রমনা মডেল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম আঁশেক আকা বলেন, আমি ওই সময় একটু দূরে ছিলাম। পরে বিষয়টি ওই সাংবাদিকের কাছে শুনেছি। বিষয়টি নিয়ে কুড়িগ্রাম জেলা ও চিলমারী উপজেলা সংবাদকর্মীরা ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। এবিষয়ে কুড়িগ্রাম প্রেস ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজার রহমান টিউটর বলেন, ‘কোনো সরকারি কর্মকর্তা সাংবাদিকের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ করতে পারেন না। এ জন্য তাকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। কারণ তিনি প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী, সবার সঙ্গে ভালো আচরণ করা উচিত।’
চিলমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রহিম বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাত ১০টার পরে এসপি স্যার এসেছিলেন। কিন্তু ফোন কেড়ে নেওয়ার ঘটনা আমার জানা নেই।
এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার মোঃ মাহফুজুর রহমান বলেন,এটি ভুল তথ্য। রাতে অভিযানের সময় একটা ইয়ং ছেলে অন্ধকারে ভিডিও করতে ছিল। তাকে বলেছি ভিডিও করোনা। যাস্ট এটুকু। সেতো পরিচয় দেয়নি সে সাংবাদিক। তার আইডি কার্ডও ছিলনা। আমরা ভেবেছি ফেসবুকে ছাড়তে ভিডিও করেছে। এজন্য ডিলেট করে দেয়া হয়। মিডিয়া নিয়ে আমরা এটা বলতে পারিনা।
পুলিশের বিবৃতি এ ঘটনায় শুক্রবার রাত সাড়ে আটটার দিকে কুড়িগ্রাম পুলিশ মিডিয়া সেলের মিডিয়া অফিসার ও, ওসি ডিবি মোঃ বজলার রহমানের স্বাক্ষরিত এক বিবৃতি সাংবাদিকদের পাঠিয়েছে জেলা পুলিশ। তাতে দাবী করা হয়, কুড়িগ্রাম জেলার পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে সাংবাদিকের মোবাইল থেকে ভিডিও ডিলেট করার সংবাদ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ভিন্নভাবে প্রকাশ হয়েছে।
কুড়িগ্রামের চিলমারীতে তিস্তা ব্রীজের উপরে নবনির্মিত হরিপুর তিস্তা ব্রীজের পার্শ্বে মা মেয়েকে উত্যক্তের অভিযোগে চিলমারী ও গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ এলাকার লোকজনের মধ্যে চলমান উত্তেজনাকে কেন্দ্র করে ১০ এপ্রিল রাতে জেলা পুলিশের একটি টিম অস্ত্র উদ্ধার সংক্রান্ত গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিশেষ অভিযান পরিচালনার সময় অজ্ঞাত এক উৎসুক তরুন গোপন অভিযানের ভিডিওধারন শুরু করে। ওই তরুন নাম পরিচয় না দিয়েই ভিডিও ধারন করলে অভিযানের তথ্য ফেসবুকে ফাঁসের আশংকা করে তার মোবাইল হতে ভিডিও ডিলিট করার পরামর্শ দেয়া হয়। তরুনের সাংবাদিক পরিচয় পুলিশের জানা ছিলনা। পুলিশ ও মিডিয়া পরস্পর বন্ধু। মিডিয়াকে আঘাত করে কোন শব্দ উচ্চারণ করা হয়নি। একটা নির্জলা মিথ্যে ছড়ানো হচ্ছে। তার পরিচয় জানতে পেরে আগামীকাল সাংবাদিকদের সাথে মত বিনিময় সভায় তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বিষয়টি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ভুলভাবে প্রকাশ করায় বিষয়টি নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে।
Leave a Reply