মামুন রাফী
রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠন এফবিসিসিআই (ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি) নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন সংগঠনের সাবেক নেতারা ও সদস্য ব্যবসায়ীরা। ‘এফবিসিসিআই স্বার্থ সংরক্ষণ পরিষদ’ ব্যানারে সংগঠিত হয়ে তারা সহায়ক কমিটির বিলুপ্তি এবং সরকারের নিযুক্ত প্রশাসকের পদত্যাগ দাবি করেছেন।
শনিবার (১২ এপ্রিল) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা অভিযোগ করেন, বর্তমান প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান ও তার মনোনীত সহায়ক কমিটি এফবিসিসিআইয়ের কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করছে এবং ব্যবসায়ীদের প্রকৃত স্বার্থ উপেক্ষিত হচ্ছে।
সংগঠনের সাবেক পরিচালক ও নেতারা দাবি করেন, প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর হাফিজুর রহমান নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন। তার গঠিত চার সদস্যের সহায়ক কমিটি নিয়মবহির্ভূতভাবে গঠিত, যেখানে একই অ্যাসোসিয়েশন থেকে একাধিক সদস্য রাখা হয়েছে। অভিযোগ অনুযায়ী, এই কমিটি এখন নিজেদের স্বার্থে কাজ করছে এবং নির্বাচন প্রক্রিয়া বিলম্বিত করছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, সরকার প্রশাসককে ১২০ দিনের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করে দায়িত্ব হস্তান্তরের নির্দেশ দিলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। তারা মনে করেন, ফেডারেশনের সংস্কার কাজও ধীরগতিতে চলছে, যার ফলে নির্বাচনের পথ আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপিত চার দফা দাবির মধ্যে রয়েছে:
১. নির্বাচিত ব্যবসায়ী প্রতিনিধি থেকে প্রশাসক নিয়োগ,
২. দ্রুত সংস্কার শেষ করে নির্বাচনের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের হাতে সংগঠনের দায়িত্ব ফিরিয়ে দেওয়া,
৩. সহায়ক কমিটি বাতিল করে নিরপেক্ষ ব্যবসায়ীদের নিয়ে নতুন কমিটি গঠন (যারা পরবর্তী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না),
৪. চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি মনোনয়নে প্রত্যক্ষ ভোট প্রথা চালু করা।
এ দাবিগুলো বাস্তবায়নে ১০ দিনের সময়সীমা বেঁধে দেন তারা। তা না হলে বৃহত্তর আন্দোলন, মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণের হুঁশিয়ারি দেন তারা।
ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, বাজেট প্রণয়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে প্রশাসক সাবেক সভাপতি, পরিচালক ও খ্যাতিমান উদ্যোক্তাদের মতামত নেননি। এমনকি সম্প্রতি বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) আয়োজিত বিনিয়োগ সম্মেলনে যোগ দেওয়া প্রতিনিধিদের অনেকেই এফবিসিসিআইয়ের সদস্য নন, এমনকি তাদের কোনো ব্যবসা নেই বলেও অভিযোগ উঠেছে। অথচ প্রকৃত ব্যবসায়ীদের অবহেলিত করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক আনোয়ার হোসেন, মো. জালালউদ্দীন, মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ, নিজামউদ্দীন রাজেশ, আবু মোতালেব, খন্দকার রহুল আমিন, শফিকুল ইসলাম ভরসা ও হাফেজ হারুনসহ অনেকে। তারা বলেন, এফবিসিসিআই একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান, এটি কোন গোষ্ঠীর স্বার্থে ব্যবহৃত হতে পারে না। সঠিক নেতৃত্বের মাধ্যমে সংগঠনটি তার স্বকীয়তা ফিরে পাক- এই প্রত্যাশা তাদের।
Leave a Reply