ঐতিহ্যবাহী ফান্দাউক দরবার শরীফের দুই দিন ব্যাপী বার্ষিক ঈসালে সাওয়াব গত শুক্রবার বাদ জুমা শুরু হয়ে মাহফিল আজ রবিবার বাদ ফজর মিলাদ ও আখেরী মোনাজাতের মাধ্যমে সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। লাখো লাখো ভক্ত মুরিদের অশ্রুভেজা আমীন আমীন ধ্বনিতে মহান আল্লাহর দরবারে মোনাজাতে মুসলিম উম্মাহর জন্য ফরিয়াদ করেন ঐতিহ্যবাহী ফান্দাউক দরবার শরীফের বর্তমান পীর ও বাংলাদেশ আঞ্জুমানে খাদিমুল ইসলামের আমীর মাওলানা মুফতী সৈয়দ ছালেহ আহমাদ মামুন আল-হোসাইনী। এর শেষ দিন শনিবার বাদ মাগরিব তালীম পরবর্তী আলোচনায় বর্তমান পীর সাহেব গুরুত্বপূর্ণ নসিহত পেশ করে বলেন-আমাদের পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের অস্থিরতা দূর করে স্থায়ীভাবে শান্তি চাইলে আমার নবীর সুন্নতের অনুসরণ ও নবীজীর জিন্দেগীর অনুকরণের কোন বিকল্প নাই। গোটা পৃথিবীতে অশান্তির মূল কারণ আমরা নবীজীর তরিকা ছেড়ে পশ্চিমাদের প্রেসক্রিপশন গ্রহণ করছি। তাই আজকে আমাদের সন্তানগুলো উচ্চ শিক্ষিত হচ্ছে কিন্তু সুশিক্ষা তথা কুরআনের শিক্ষা না থাকায় আমাদের পরিবার চুড়ান্ত ধ্বংসের দিকে নিপতিত হচ্ছে। সন্তান পিএইচডি হোল্ডার হয়ে বড় চাকুরী করে কিন্তু শেষ বয়সে বাবা-মাকে বিদ্যাশ্রমে পাঠায়। আপনাদের পরিবারের সুখ শান্তি চাইলে কুরআনের শিক্ষা ও নবীজীর সুন্নতের বাস্তবায়ন করেন তবেই পরিবারে চিরস্থায়ী শান্তি আসবে।
পীর সাহেব আরও বলেন, সমাজে যদি শান্তি চান তবে ইমাম খতিবদের যথাযথ মূল্যায়ন করুন এবং মিম্বরে তাদের হক্ব কথা বলার জন্য সাহস জোগান। মসজিদ কমিটি ও মাহফিল কমিটি থেকে সুদখোর, ঘুষখোর বেনামাজিদের বয়কট করুণ। এদের হাতে যতদিন পর্যন্ত এই সমাজের নেতৃত্ব থাকবে ততদিন সমাজে শান্তি আসবেনা। আর সমাজে শান্তি না আসলে দেশ ও জনগণ কখনোই শান্তিতে থাকবে না। সমাজে অশান্তি বিরাজ করার জন্য কথিত কিছু আলেম নামধারী শায়েখও দায়ী যারা ঈদে মিলাদুন্নবী সাঃ, শবেবরাত, শবে মিরাজ এসব মহিমান্বিত রাত আসলে উম্মতকে ইবাদত থেকে সরিয়ে মনগড়া ফতোয়া দিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। মনে রাখবেন এদের ইসলামে নূন্যতম অবদান নেই। আপমারা জানেন বাংলাদেশে ইসলাম এসেছে ওলী-আউলিয়ার মাধ্যমে। এদেশের মানুষ ঈমান ও ইসলাম পেয়েছে হক্কানি ওলীদের মাধ্যমে অথচ আজ একদল পথভ্রষ্ট লোক পীর মুরিদীর বিরুদ্ধে শিরকের ফতোয়া দেয়। অন্য দিকে এদের মতো কথিত ইসলামি দলের নেতারাদের মূর্তি পাহারা দিতে মন্দিরে দেখা যায়। যারা মানুষকে পৌত্তলিকতা থেকে রক্ষা করে ঈমানের পথে সিরাতে মোস্তাকিমের পথে পরিচালিত করছেন হজরত শাহজালাল রহঃ এবং ওনার সঙ্গীদের মাজার ভাঙ্গতেও তাদের ভূমিকা এদেশের ইসলাম প্রিয় মানুষ ইতিমধ্যেই দেখেতে পেয়েছে। মনে রাখবেন তারা আমাদের ইবাদতে নাপিতগিরী করতেছে, তারাবির নামাজ বিশ রাকাআতের জায়গায় আট রাকাআতের কথা বলে বিতিরের নামাজ তিন রাকাআত থেকে এক রাকাআত পড়ার কথা বলে সহীহ হাদিসে কথা মূলত হাদীস ও সুন্নতের বিরোধীতা করে তারা কখনো আহলে হাদীস হতে পারেনা বরং তারা লামাযহাবী নামক বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় ফেৎনাবাজ। তারা কলে কৌশলে মূলত ইহুদিদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চায়। তাদেরকে বয়কট করতে হবে। এদের ওয়াজ শোনা থেকে বিরত থাকতে হবে। কোনভাবেই এসব ঘোমটাওয়ালা শায়েখদের খপ্পরে পরা যাবেনা। আমাদের যুব সমাজ আজ তাদের ধোঁকায় পড়ে প্রতিনিয়ত ঈমান হারা হচ্ছে। এদের মধ্যে কিছু স্কলার এমনও যারা আমার নবীর ব্যাপারে ও আম্মাজানদের শানে করুচিপূর্ণ শব্দ প্রয়োগ করে মুসলমানদের হৃদয় থেকে নবীর মহব্বত ও তাজিম নষ্ট করে দিচ্ছে।
পীর সাহেব কিবলা আরও বলেন এই দেশে ঈমান, ইসলাম ও শান্তি নিয়ে এসেছেন ওলী-আউলিয়া ও হক্কানি দরবারের পীর মাশায়েখগণ। এই ফান্দাউক দরবারের খেদমতের কথা যদি বলতে চাই তাহলে দেখবেন প্রায় সাতশো বছর ধরে শুধু এই উপমহাদেশেই খেদমত চলমান আছে। আমাদের পূর্বপুরুষ সিপাহসালার সৈয়দ নাসিরুদ্দিন রহঃ যিনি আরবদেশ থেকে এই দেশে শুভাগমন করেছিলেন। এভাবে প্রতিটি হক্ব সিলসিলার খেদমতের কারণেই এই উপমহাদেশের ঈমান, ইসলাম ও সঠিক আক্বিদার অনুসারী হয়ে খাঁটি মানুষে পরিণত হয়েছে। তাই আমরা যেন প্রতিটি হক্ব দরবারকে হৃদয় থেকে ভালোবাসি এবং ভন্ডামি থেকে মুক্ত থেকে দেশ ও জাতী গঠনে ভূমিকা রাখতে পারি এই আহবান করছি।
পীর সাহেব কিবলার মোনাজাতের পূর্বে দ্বিতীয় দিনের প্রধান মেহমান হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি ও দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন। তিনি বলেন- ফান্দাউক দরবার বাংলাদেশের হক্ব দরবার গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি দরবার। যাদের খেদমতের কারণে আজ লক্ষ লক্ষ ভক্ত মুরিদ ও ইসলাম প্রিয় সত্যিকার দেশ প্রেমিক মানুষ এখানে সমবেত হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ ইসলাম ও আলেম ওলামা এবং পীর মাশায়েখদের কতটা সম্মান করে আজকের মাহফিল তার জ্বলন্ত প্রমাণ। এই দেশে আল্লাহর ওলীদের নেক দোয়ার কারণেই মূলত শান্তি বিরাজ করছে। ভবিষ্যতে যারাই দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিবেন আপনাদের অবশ্যই এই জনশক্তির বিষয় মাথায় নিয়ে ইসলামকে প্রাধান্য দিয়েই চিন্তা করতে হবে। নতুবা অতীতের মতো আপনাদেরও পরিণতি ভোগ করতে হবে। এবং ইসলাম নিয়ে যারা ব্যবসা করে তারাও ক্ষমতায় আসতে পারবেনা। প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা এই দরবারগুলোতে আসলেই পাওয়া যায়।
২য় দিন মাহফিলে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা পেশ করেন- মৌকারা দরবার শরীফের পীর মাওলানা নেছারুদ্দীন ওয়ালী উল্লাহী, ঢাকা নেছারিয়া কামিল মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ ড. কাফিল উদ্দিন সরকার সালেহী,দারুন্নাজাত সিদ্দিকীয়া কামিল মাদরাসার হেড মুহাদ্দিস মুফতি আব্দুল লতিফ শেখ, অধ্যাপক ড. এবিএম আব্দুস সালাম, মুফতি আলাউদ্দিন জিহাদি, মুফতি নেছার উদ্দিন ফেনী, মাওলানা হাফেজ ওয়ালি, মাওলানা জামিল আহমদ চৌধুরী প্রমূখ। উপস্থিত ছিলেন পিজি হাসপাতালের নাক কান গলা বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ডাঃ কামরুল হাসান তরফদার, কবি ও সাহিত্যিক মাওলানা শাহ মাসুদ, মাওলানা ডাঃ শাহ সাফিউর রহমান বালাউটী, সিঙ্গারকুড়ি সাহেবজাদা মাওলানা ফাহিম আহমদ চৌধুরী প্রমূখ।
মাহফিলের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন পীরজাদা মাওলানা মুফতী সৈয়দ মঈনুদ্দিন আহমাদ আল-হোসাইনী, মাওলানা মুফতী সৈয়দ আবুবকর সিদ্দিক আল-হোসাইনী, মাওলানা মুফতী সৈয়দ বাকের মোস্তফা আল-হোসাইনী।
Leave a Reply