গোলাম আলী নাইম, ঢাকা বিশেষ প্রতিনিধি:
আজ ঐতিহাসিক ১৬ই ডিসেম্বর, গৌরবান্বিক বিজয় দিবস। জালিমদের জুলুমের প্রতিবাদে ইনসাফের দাবীতে ১৯৭১ সালের এই দিনে প্রায় নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পরে ৩০ লক্ষ শহীদের জান কুরবানীর মাধ্যমে অর্জিত হয় এই স্বাধীন বাংলার বিজয়। আজ বিজয়ের ৫৩ বছর পূর্ণ হয়েছে। যে ইনসাফের দাবীতে, যে স্বাধীনতার দাবীতে এই বাংলার আপামর মুসলমান ছাত্র-শ্রমিক-জনতা জানবাজি রেখে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিলো সেই স্বাধীনতার কতটুকু অর্জিত হয়েছে তা চিন্তার বিষয়। আমরা একটি স্বাধীন ভুখন্ড আর শুধুমাত্র লাল-সবুজের একটি পতাকা নিয়েই কি সন্তুষ্ট? যে বৈষম্যের বিপরীতে ১৯৭১ এ রক্ত দেয়া হয়েছে আবার ২০২৪-এ রক্ত দেয়া হছে সেই বৈষম্য এখনও সংস্কারের নতুন ছদ্মাবরণে শতকরা ৯৮ ভাগ মুসলমানের এই দেশে রয়ে গেছে। উপরন্তু আরো নতুন নতুন ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত এদেশের মানুষের ঈমানী অনুভূতিকে আঘাত করে যাচ্ছে, প্রায় ৪০ কোটি মুসলমানের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। এখনও মুসলমানেরা স্বাধীনভাবে ইসলাম পালন করতে বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে, পর্দানসীন নারীকে হেনস্তা করা হচ্ছে, সাধারণ মানুষ ক্ষুধার্ত রয়েছে। আর মুসলমানদের মধ্যে ঘাপটি মেরে লুকিয়ে থাকা ধর্মব্যবসায়ী ওলামায়ে ছু’রা এবং তাদের পৃষ্ঠপোষক প্রতারক জালিম শাসকেরা কখনও ভীতি প্রদর্শন, কখনও সংস্কার, কখনও পরিবেশবাদ ইত্যাদি নানা অজুহাতে এদশের মানুষকে অন্ধকারের মধ্যে রেখে জুলুম চালিয়ে যাচ্ছে। এটা পরিপূর্ণ স্বাধীনতা নয়, এটা প্রকৃত বিজয় নয়। অনেক কুরবানীর মাধ্যমে অর্জিত এই স্বাধীন বাংলাদেশে চলমান সমস্যা সমাধানে ইনসাফ কায়েমকারী ছাত্র-শ্রমিক-জনতা আজ ১০ দফা দাবী উত্থাপন করছি। আমাদের দাবীসমূহ হলোঃ
১ম দফা – নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুবারক শানে কোন কুলাঙ্গার মানহানী করলে তার শরঈ শাস্তি মৃত্যুদন্ড বাস্তবায়ন করতে হবে। পাঠ্যক্রমে নূরে মুসজাসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং মহাসম্মানিত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের পবিত্র জীবনী মুবারক অন্তর্ভূক্ত করতে হবে এবং পবিত্র দ্বীন ইসলাম নির্ভর শিক্ষানীতি প্রণয়ন করতে হবে। আরবী ভাষা শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে।
২য় দফা- অবশ্যই এই্ দেশের রাষ্ট্রদ্বীন ইসলাম অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে। পাহাড়ি রাজাকারপুত্র উপজাতি সন্ত্রাসী দেবাশিষ রায়সহ যারা রাষ্ট্রদ্বীন ইসলামের বিরোধীতা করবে তাদেরকে রাষ্ট্রদ্রোহী- ইসলাম বিদ্বেষী হিসেবে গ্রেফতার করে তাদেরকে মৃত্যুদণ্ড শাস্তি দিতে হবে।
৩য় দফা- পর্দা পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার শেয়ার। পর্দা করা মুসলমানদের দ্বীনী অধিকার। মুসলমান মেয়েদেরকে পর্দা করেই স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনা করা, পরীক্ষা দেয়া এবং সরকারী-বেসরকারী সকল প্রতিষ্ঠানে স্বাধীনভাবে সসম্মানে চলাচল করার এবং অবস্থান করার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। কেউ পর্দাকে কটাক্ষ করলে বা কেউ কোন পর্দানসীন নারীকে হেনস্তা করলে তাকে গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। পর্দাকে অবমাননার করার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড রাখতে হবে।
৪র্থ দফা- গরুর গোস্ত খাওয়া হচ্ছে ইসলামের শেয়ার বা নিদর্শন। তাই দেশের সকল খাবার হোটেলে গরুর গোস্ত রাখা বাধ্যতামূলক করতে হবে। যে সমস্ত হোটেলে নো-বিফ লেখা থাকবে সেসমস্ত হোটেল বন্ধ ঘোষণা করতে হবে। দেশের সর্বত্র সকল বাজারে গোস্ত বিক্রেতাদেরকে অবশ্যই গরুর গোস্ত প্রতিদিন রাখতে হবে। প্রতিদিন গরু জবাই করতে পারবে। গরু জবাই করার জন্য কোন দিনকে নির্দিষ্ট করা যাবেনা। ভারতে গরুর গোস্তের জন্য মুসলমানকে শহীদ করার জন্য উগ্র হিন্দুদের শাস্তির দাবী রাষ্ট্রীয়ভাবে জানাতে হবে। ভারতের আসামে বা কোনো প্রদেশে গরুর গোস্ত নিষিদ্ধ করতে পারবেনা। গরুর গোস্ত নিষিদ্ধ সহ মুসলমানদের উপর কোনো প্রকার জুলুম করলে রাষ্ট্রীয়ভাবে তার প্রতিবাদ করতে হবে।
৫ম দফা- বেওয়ারিশ কুকুরের কামড়ে প্রতিদিন অসংখ্য সাধারণ মানুষ আহত হচ্ছেন। অনেকে ‘র্যাবিস’ নামক রোগে মারাও যাচ্ছে। কিন্তু তারপরও কতিপয় কুকুর পূজারী এনজিওদের কারণে এই সব কুকুর নিধন করা যাচ্ছে না। অথচ পবিত্র দ্বীন ইসলামে বেওয়ারিশ কুকুর নিধন করার হুকুম। তাই মানুষের কল্যানের জন্য অবিলম্বে বেওয়ারিশ কুকুর নিধন করতে হবে। পাশাপাশি কুকুর পূজারীদেরকে গ্রেফতার করে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
৬ষ্ঠ দফা- নারিকেল জিনজিরা দ্বীপকে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে। নারিকেল জিনজিরা দ্বীপে পর্যটন প্রবেশে কোনো প্রকার বাঁধা দেয়া যাবেনা। স্বাধীন বাংলার মানুষ দেশের সর্বত্র চলাচল করতে পারবে। এর জন্য আলাদা সরকারী অনুমতি নেয়ার নিয়ম বাতিল করতে হবে।
৭ম দফা- দেশের সর্বত্র একই আইন চলবে। এক দেশে দৃই আইন রাখাটা স্পষ্ট বৈষম্য। তাই পার্বত্য চট্টগ্রামের ও সারা দেশের মতই একই আইন চলতে হবে। পাহাড়ের রাজা প্রথা বাতিল করতে হবে। পাহাড়ের উপজাতিদের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী বলতে হবে, আদিবাসি বলা যাবেনা।
৮ম দফা- উগ্র হিন্দুত্ববাদ ও ইসকনসহ উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংকল সংগঠনকে নিষিদ্ধ করতে হবে। যারা অখণ্ড ভারতের প্রচার করে তাদেরকে গ্রেফতার করে শাস্তি দিতে হবে। এই দেশকে ভারতের অঙ্গরাজ্য করতে চাওয়ার অপরাধে এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে শত্রুতা করার দায়ে ইসকন, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদসহ সকল উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের নেতাদের ফাঁসি দিতে হবে।
৯ম দফা- মুসলমানদের পরিচয়ে থাকার পরও যেসম্ত ধর্মব্যবসায়ী ওলামায়ে ছূ’রা হিন্দুদের দালালী করে, মুসলমানদেরকে হিন্দুদের সাথে সম্প্রীতি করতে বলে, মন্দির পাহার দেয়, মুসলমানদেরকে পর্দার ব্যাপারে শিথিল হতে বলে তাদেরকে মুনাফিক এবং প্রতারক হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। এদরকে সমাজচ্যূত করতে হবে। মুসলমানদের বাচতে হলে এসব উলামায়ে ছুদের বর্জন করতে হবে। এদের গ্রেফতার করে শরঈ শাস্তি বাস্তবায়িত করতে হবে।
১০ম দফা- নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য এবং চিকিৎসা সেবার মূল্য মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখতে হবে । দ্রব্যমূল্য এবং সেবামূল্যের উর্ধগতি রোধ করতে হবে।
১১তম দফা- বিজয় দিবস উদযাপন বা নববর্ষবরণ বা থার্টি ফাস্ট নাইটের নামে বেহায়াপনা, গানবাজনা, অশ্লীল কনসার্ট, মদপানসহ সকল হারাম কাজকে নিষিদ্ধ করতে হবে।
১২তম দফা- নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শানে ইহানত করার অপরাধে প্রধান উপদেষ্টাকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। চট্টগ্রামের সুন্নী নেতা এনাম রোজার সাথে সহমত পোষণ করে আমরা দাবী করছি যে বা যারা উনার শানে মানহানি করবে তাদেরকে গ্রেফতার করে ফাঁসি দিতে হবে। সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেছেন, গণঅভ্যুত্থানের বিশ্বাসের সঙ্গে বেঈমানি করলে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসকেও ছাড় দেওয়া হবে না। পাশাপাশি পরিবেশবাদের মিথ্যা অজুহাতে নারিকেল দ্বীপকে সরকারীভাবে অবরোধ করার অপরাধে এবং দেশের মানুষের রুটি রুজির পথকে বাঁধাগ্রস্থ করার অপরাধে পরিবেশ উপদেষ্টা রেজওয়ানকেও বহিষ্কার করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
সমাবেশে ইনসাফ কায়েমকারী ছাত্র-শ্রমিক-জনতার শতাধিক কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply