মহিউদ্দিন মহি খন্দকার:
ফেনী শহরের কুমিল্লা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবশেষে ট্রাংক রোডের পশ্চিম পাশে ড্রেন নির্মাণ কাজ পূন:রায় চালু হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে পতিত সরকারের আমলে শহরের গুরুত্বপূর্ণ ড্রেনগুলো নির্মাণ হলেও বিভিন্ন চেষ্টা তদবীরের কারণে এই ড্রেনটি নির্মাণ কাজ বারবার বাঁধাগ্রস্ত হয়। এতে পথচারীদের দূর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা যায়, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় একাধিক বার এই ড্রেন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হলে ও শিশু নিকেতন কালেক্টরেট স্কুল পর্যন্ত এসে ড্রেন নির্মাণ কাজ থমকে দাঁড়ায়। তৎকালীন গডফাদার নিজাম হাজারী মোটা অংকের টাকা নিয়ে এবং তার অনুগত কতিপয় ব্যক্তিকে সুবিধা দিতে ড্রেন নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন হয়নি। তবে এজন্য একটি মাস্টার প্ল্যান করা হয়েছিল বলে পৌরসভা সূত্র নিশ্চিত করেছে।
ফ্যাসিস্ট বাহিনী পালিয়ে যাওয়ার পর পূর্বের মাস্টার প্ল্যান কিছুটা রদবদল করে আরেকটা প্ল্যান তৈরি করা হয়। সে প্ল্যান অনুযায়ী কাজ শুরু করা হলেও কোন এক অদৃশ্য শক্তির কারসাজিতে প্ল্যানের কোন তোয়াক্কা না করে জগাখিচুড়ি কাজ করার চেষ্টা চলছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন।
এছাড়া ও ড্রেনের জন্য চলছে এক অভাবনীয় কান্ড। এখানে কোথাও রাস্তার পাশে দোকান ভেঙ্গে তছনছ করে দেয়া হচ্ছে আবার কোথাও কোথাও কাউকে সুবিধা দেয়ার জন্য দখলদারদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে ড্রেনকে বাঁকা করে নির্মাণের প্রক্রিয়া চলছে। আবার কোথাও কোন কারন ছাড়াই সড়কের পাকা অংশ ঘেঁষে ড্রেন নির্মাণ কাজ চলছে।অথচ পেছনে সরকারে খালি জায়গা বা পরিত্যক্ত ঘর পড়ে আছে। বিশেষ করে ডাক্তার পাড়া রোডের মাথা থেকে লতিফ টাওয়ার পর্যন্ত ড্রেন আঁকা বাঁকা করে নির্মাণ করা হচ্ছে। নবনির্মিত ড্রেনের পরে রোডস এর জায়গা আছে, তারপরে সরকারের খাস জায়গা আছে। তবু কেন সড়কের পিচ ঘেঁষে ড্রেন নির্মাণ চলছে তার কোন জবাব কর্মকর্তাদের কাছে নেই। এই ড্রেন দুই চার বছর পরই ভেঙ্গে আরো অন্তত দশ ফিট পেছনে নিয়ে তৈরী করতে হবে। পর্যাপ্ত জায়গা থাকা সত্ত্বেও তা এখন হচ্ছেনা। এভাবে ড্রেনকে বাঁকা করার কারণে অদুর ভবিষ্যতে এই ড্রেন সম্পূর্ণ অকার্যকর হয়ে পড়বে। ড্রেনের পানি ও ময়লা নিস্কাশনে বাঁধাগ্রস্থ হবে। এর ফলে জনদূর্ভোগ আরো বেড়ে যাবে।
এক সময় বলা হতো অমুক তমুকের কারণে সরকার সঠিকভাবে প্ল্যান অনুযায়ী কাজ করতে সক্ষম হচ্ছেনা। এখন কেন ঠিক ভাবে কাজ হচ্ছেনা এনিয়ে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা চলছে যা কর্তা ব্যাক্তিদের কানে হয়ত পৌঁছচ্ছে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, ‘‘আমি কিছুই জানিনা। আমাকে কোন কিছু না জানিয়ে পৌরসভা কাজ করে যাচ্ছে। আপনারা পৌরসভার প্রশাসককে এসব প্রশ্ন করুন।’’ তিনি আরো বলেন, ‘‘আমি এখনো এই চেয়ারে আছি। আমি চলে গেলে এক কথা। আর আমি তো থাকতে আসিনি। আসছি মানেই তো চলে যেতে হবে। অথচ তারা আমাকে কিছু না জানিয়ে তাদের মতো করে কাজ করে যাচ্ছে। সেখানে আমার জায়গা কতটুকু তা মেপে আমরা অল্প সময়ের মধ্যে বের করবো।’’
জানতে চাইলে পৌর প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার উপ-পরিচালক গোলাম মো: বাতেন বলেন, ‘‘আমরা তো কাজ করতে চাই এবং সঠিকভাবে করতে চাই। কিন্তু কাজ করতে গেলে নানামুখী বাধার সম্মুখীন হই। এবার বড় বাধার সম্মুখীন হচ্ছি সাংবাদিকদের। সাংবাদিকদের একটা গ্রুপ কঠিন বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে আমরা যেন কিছু লোককে বিশেষ সুবিধা দিই। ফলে আমরা বাধ্য হয়ে প্ল্যান রদবদল করে ড্রেন বাঁকা করছি।’’
এ ব্যাপারে পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ জাকির উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘২০-২২ জনের এক গ্রুপ সাংবাদিক আমাদের কাজে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। তাদের কারণে কাজ স্বাভাবিক গতিতে এগোচ্ছে না। অপরদিকে এ ব্যাপারে একটি মামলাও হাইকোর্টে আছে। আজ পৌর প্রশাসক সাহেব তাদেরকে তিন দিনের সময় বেঁধে দিয়ে বলেছেন এই তিন দিনের মধ্যে আমাদেরকে কোর্টের রায় এনে দিবেন। নতুবা আমরা আমাদের মত কাজ করে ফেলবো। না হয় প্রকল্পের টাকা ফেরত চলে যাবে।’’
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট নুরুল আমিন খান বলেন, ‘‘রাস্তার পশ্চিম পাশে সড়ক ও জনপদের জায়গা এবং জেলা প্রশাসনের খাস জায়গা রয়েছে। এগুলোর স্থায়ী ও অস্থায়ী কোন বন্দোবস্ত নেই। এমন কি একসনা বন্দোবস্তও নেই। উনারা এক বছরের একটা অনুমতি নিয়েছেন সেটা বছর বছর নবায়ন করার নিয়ম থাকলেও অনেক বছর যাবত কোন নবায়ন তারা করেননি। এরই মধ্যে তাদের কেউ কেউ প্রতি শতক ৬০-৭০ লাখ টাকা দরে অনেকে বিক্রি ও করা হয়ে গেছে। সেসব বিক্রিত জমিতে বহুতলা ভবনও তৈরি হয়ে গেছে। যারা নিজেরাই মালিক নন তারা কিভাবে বিক্রি করেন?’’ তিনি আরো বলেন, ‘‘আমি জেলা প্রশাসক সাহেবকে বলেছি আপনার জায়গা অর্থাৎ সরকারের খাস জায়গা এবং সড়ক ও জনপদের জায়গা বের করে চিহ্নিত করেন। তার পর যা খুশি করেন।’’
ফেনীর প্রশাসনের কাছে ফেনীবাসীর প্রশ্ন কার নির্দেশে, কাকে সুবিধা দেয়ার জন্য এবং কার কাছ থেকে সুবিধা নেয়ার জন্য ফেনীবাসীর এতবড় ক্ষতি করার জন্য তাঁরা উঠে পড়ে লেগেছেন?
Leave a Reply