গোলাম আলী নাইম, ঢাকা বিশেষ প্রতিনিধি:
সম্প্রতি মাটিরাঙা সরকারি ডিগ্রি কলেজের একজন অন্তঃস্বত্ত্বা নারী শিক্ষার্থী ইসলামী নির্দেশনা অনুযায়ী চেহারা ঢেকে পর্দা করায় তাকে হেনস্থা করার পাশাপাশি পরীক্ষার হল থেকে বের করে দেয় কলেজ কর্তৃপক্ষ। একজন মুসলিম নারী শিক্ষার্থীর দ্বীনী অধিকার পর্দা পালনে বাধা এবং পর্দা পালন করায় উক্ত কলেজ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক তাকে হেনস্থা ও শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করায় সারাদেশের মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়েন এবং প্রতিবাদ জানান।
বক্তারা আরো বলেন,
সাম্প্রতিক পর্দা-হিজাববিরোধী ঘটনাগুলো আমরা পযবেক্ষণ করে দেখছি যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষকসহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মুসলমান নারীর হিজাব ও পর্দার বিরুদ্ধে অবস্থান ভারতীয় হিন্দুত্ববাদী আদর্শেরই আমদানি।
২০২২ সালে কর্ণাটকে মান্ডা জেলার বি.কম শিক্ষার্থী মুসকান বোরখা-হিজাব পরিধান করে কলেজে গেলে হিন্দুত্ববাদীরা 'জয় শ্রী রাম' স্লোগান দিয়ে তাকে হেনস্তা ও ভয় দেখানোর চেষ্টা করে। প্রতিবাদে মুসকান 'আল্লাহু আকবার' স্লোগান দিতে দিতে কলেজে প্রবেশ করেন। হিজাব নিষিদ্ধ করায় সেই কলেজের প্রিন্সিপালকে 'শ্রেষ্ঠ অধ্যক্ষ' সম্মাননা দিয়েছিল কর্ণাটকের হিন্দুত্ববাদী সরকার।
কর্নাটকের উক্ত ঘটনার পর পর আমরা ঢাবিতে বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। বাংলা বিভাগ, শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগে হিজাব পরা শিক্ষার্থীদের নিপীড়ন করাসহ পরীক্ষা দিতে না দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। সেগুলোর প্রতিবাদ করায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ঢাবি কোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নয় বলে বিবৃতি দেয়। পর্দানশীন শিক্ষার্থী নিপীড়ন ও তাদের হিজাবের অধিকার থেকে বঞ্চিত করার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা সরব হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ারও দাবি জানায় শিক্ষক সমিতি। (সূত্র: চ্যানেল আই অনলাইন ৩রা সেপ্টেম্বর, ২০২৩)
‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’ শিক্ষক সমিতির উপরোক্ত বিবৃতি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছে এবং পর্দা ও হিজাববিরোধী শিক্ষকদের চাকুরিচ্যুতির পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছে ঢাবি প্রশাসনের নিকট।
শিক্ষকদের পর্দা-হিজাব বিরোধী মনোভাব বাংলাদেশে হিন্দুত্ববাদের উত্থানের সাথে ওৎপ্রোতভাবে জড়িত। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ বাংলাদেশের মানুষের মূল্যবোধ ও স্বকীয়তা বাদ দিয়ে কলকাতার হিন্দুত্ববাদী বাংলা আমাদের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে। বাংলা ভাষার ইতিহাস, সংস্কৃতি, ব্যাকরণ, বানানরীতি, উচ্চারণ রীতিসহ পর্দা-হিজাববিরোধী হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসন প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে ঢাবিতেও নিয়ে আসছে। এনসিটিবিও একইভাবে ভারতীয় হিন্দুত্ববাদী শিক্ষানীতি বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পর্দা-হিজাববিরোধী হিন্দুত্ববাদী চেতনার বাস্তবায়ন দেখা যাচ্ছে।
গত ১০ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ম্যাগাজিন ‘দ্য ডিপ্লোম্যাট’ বাংলাদেশে ভারতীয় বিজেপির হিন্দুত্ববাদী আদর্শের উত্থান ঘটছে বলে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশে হিন্দুত্ববাদী আদর্শের শিকড় ২০০৬ সালে হিন্দু মহাজোট গঠনের সঙ্গে জড়িত বলে সেখানে উল্লেখ করা হয়। আরএসএস ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মত (ভিএইচপি) ভারতীয় হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোর সাথে তাদের যোগাযোগ রয়েছে। জয় শ্রীরাম স্লোগানের ব্যবহার ও রামনবমী আয়োজনের মধ্য দিয়ে তারা সেটার জানান দেয়। এই রামনবমী ও জয় শ্রীরাম স্লোগান ভারতের হিন্দুত্ববাদীরা পেশিশক্তি প্রদর্শনে ব্যবহার করে।
ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) সহযোগী সংগঠন হিন্দু জাগরণ মঞ্চের সঙ্গে বাংলাদেশ হিন্দু জাগরণ মঞ্চের নামেরও মিল রয়েছে। বিজেপি আদর্শিক সাংগঠনিক গুরু হলো আরএসএস। হিন্দুত্ববাদ হলো এদের স্বঘোষিত আদর্শ। এ আদর্শকে এরা ‘হিন্দু সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদ’ বলে আখ্যা দেয়। আরএসএস অখণ্ড ভারত প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখে।
হিন্দুত্ববাদীগোষ্ঠী ভারতে যে কায়দায় মুসলমানদের উপর নির্তন নারীদের পর্দার অধিকার হরণে ব্যস্ত, একই কায়দায় বাংলাদেশেও তারা মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। বাংলাদেশ হিন্দু জাগরণ মঞ্চ বা ইসকনের মতো সংগঠনগুলোর বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যক্রম, মৃণ্ময় দাসের রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য, ঢাবি শিক্ষক শিশির ভট্টাচার্যদের ঐতিহাসিক হিজরতের ঘটনাকে কটূক্তি, কিংবা বিভিন্নস্থানে মুসলিম নারীদের বোরখা-হিজাব-পর্দা পালনে বাধা প্রদান মূলত ভারতীয় হিন্দুত্ববাদী উগ্র আদর্শেরই নিদর্শন।
'২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে দেশবাসী ভারতীয় আগ্রাসন থেকে মুক্ত হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিল। কিন্তু তাদের আগ্রাসন থেমে নেই। দেশে হিন্দুত্ববাদী আদর্শ বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি ভারতীয় আগ্রাসন ও হিন্দুত্ববাদের বিরুদ্ধে লেখালেখি করায় ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাজবির হোসেন শিহান এবং এআইইউবির শিক্ষার্থী ওয়াজেদ সীমান্তকে প্রাণ দিতে হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ৩দিন আগে কর্নাটকের হিন্দুত্ববাদীদের মতই রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজে হিজাব পরিধান করায় উম্মে আঞ্জুমানকে কলেজ থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া ঢাবিসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও স্কুলেও পর্দানশীন শিক্ষার্থীদের নিপীড়ন এবং বৈষম্যমূলক ও অমানবিক আচরণ করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের বাইরে পর্দানশীন মহিলারাও পর্দা পালন করায় রাষ্ট্র তাদেরকে নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে।
২০০৭ সালে প্রথম জাতীয় পরিচয়পত্রে মহিলাদের ছবি বাধ্যতামূলক রেখে পর্দানশীন মহিলাদের বেপর্দা করার হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডাকে ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছিল তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা হিন্দুত্ববাদীরা। যেই কারণে অনেক পর্দানশীন মহিলা জাতীয় পরিচয়পত্রও করতে পারছেন না। ফলে রাষ্ট্র কর্তৃক প্রদত্ত নানান রকম নাগরিক অধিকার থেকে উনারা বঞ্চিত হচ্ছেন।
বারবার দাবী উঠলেও সরকার, বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা শিক্ষা মন্ত্রণালয় এখন পর্যন্ত এর কোনো সমাধান করেনি। যা অত্যন্ত দু:খজনক! এভাবে চলতে থাকলে ভারতীয় আগ্রাসনের আমদানির পথ বন্ধ হবে না।
অতএব, পর্দা-হিজাববিরোধী ভারতীয় আরএসএস-বিজেপীর হিন্দুত্ববাদী উগ্র আদর্শ থেকে দেশের পর্দানশীন শিক্ষার্থী ও নারীদের মুক্ত করতে ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’ নিম্নোক্ত ৪টি দাবী পেশ করছে এবং আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে তা বাস্তবায়নে কাজ শুরু করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছে-
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি দাবী-
১. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি আদেশ/প্রজ্ঞাপন জারী করবে যাতে স্পষ্ট লেখা থাকবে যে, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের আবেদনে, ভর্তি কাযক্রমে, পাঠ গ্রহণে, পরীক্ষায় অংশগ্রহণে, ফলাফল ও সনদ প্রাপ্তিতে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোনো আইনসম্মত কার্যক্রমে অংশগ্রহণে নারী শিক্ষার্থীদের ছবি তোলা বা দেয়া এবং চেহারা দেখানোর বাধ্যবাধকতা থাকবে না।
এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সনাক্তকরণে দুটি পদ্ধতি চালু করা - (ক.) বায়োমেট্রিক পদ্ধতি (যেমন- আঙ্গুলের ছাপ/ফিঙ্গারপ্রিন্ট) এবং (খ.) চেহারা সনাক্তকরণের প্রয়োজন হলে মহিলা শিক্ষক কিংবা মহিলা কর্মকর্তা/কর্মচারির মাধ্যমে সনাক্ত করা। এর বিপরীতে পর্দানশীন শিক্ষার্থীদের সনাক্তকরণে পুরুষ শিক্ষক কিংবা পুরুষ কর্মকর্তা/কর্মচারি কর্তৃক যাচাই করা যাবে না।
২. পরীক্ষার খাতায় পরীক্ষার্থীদের নামের পরিবর্তে কোডিং পদ্ধতি চালু করা। এর ফলে পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে ব্যক্তিবিশেষের প্রতি অনুরাগ বা বিরাগ হয়ে নম্বর কম/বেশি করার সুযোগ থাকবে না।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতি দাবী-
৩. দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য উপরে উল্লেখিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুরুপ একটি প্রজ্ঞাপন/আদেশ জারী করতে হবে।
সরকারের নিকট দাবী-
৪. দেশের পর্দানশীন মহিলাদের জন্য পর্দার বিধান লঙ্ঘন করে না এমন পদ্ধতিতে অর্থাৎ পূর্বের ন্যায় ছবিবিহীন জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরী, জমি রেজিস্ট্রেশন, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, বয়স্কভাতা, বিধবা ভাতা কার্ড ইত্যাদি সব ক্ষেত্রে ছবির বাধ্যবাধকতা তুলে নেয়া। সনাক্তকরণে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি চালু এবং মহিলা কর্মকর্তা/কর্মচারির ব্যবস্থা রাখতে হবে।
আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে উপরোক্ত ৪টি দাবী বাস্তবায়নে কাজ শুরু করার জোর দাবী জানাচ্ছি।
প্রধান উপদেষ্টাঃ মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম খান,অবসরপ্রাপ্ত সেনা সার্জেন্ট।। সম্মানিত উপদেষ্টাঃ সিনিয়র সাংবাদিক মোঃ আমজাদ হোসেন রতন ।। সিনিয়র সাংবাদিকঃ ডা.এম এ মান্নান ।। সম্পাদক ও প্রকাশক: মোঃ রেজাউল করিম ।। নির্বাহী সম্পাদক: মোঃ সোলায়মান হোসাইন ।। বার্তা সম্পাদকঃ জাকারিয়া আল ফয়সাল।
যোগাযোগঃঠিকানা: হাসেম মার্কেট, কুরগাও, নবীনগর, আশুলিয়া, সাভার, ঢাকা 1216। রোড নাম্বার 733 হো নাম্বার 805 ফোন: +65 8541 3954, 01894589037,মেইল:dailynewsbangla24info@gmail.com
Copyright ©️ 2024 in Daily News Bangla 24