নুর আলম ( সাদ্দাম ) শ্রীবরদী উপজেলা প্রতিনিধি:
শেরপুরের সীমান্তবর্তী জনপদ গুলোতে বন্য হাতি ও মানুষের দ্বন্দ্ব কোন মতেই কমছে না।রাত বাড়লেই বেড়ে যাচ্ছে আতংঙ্ক ৷ সাম্প্রতিক সময়ে এ দ্বন্দ্ব আরো প্রকট আকার ধারণ করেছে। পাহাড় থেকে খাদ্যের সন্ধানে লোকালয়ে নেমে আসা বন্য হাতির দল মানুষের
ফসলের মাঠ ও বাড়িতে তাণ্ডব চালাচ্ছে। এমনকি হাতী পায়ে পিষ্ট করে, শুঁড় দিয়ে পেঁচিয়ে তুলে আছাড়ে মানুষের জীবনহানি ঘটাচ্ছে।
বছরের অন্যান্য সময়গুলোতে হাতির আনাগোনা কম থাকলেও ধান পাকার মৌসুমে হাতির বেড়ে যায় তাণ্ডব । পাহাড়ে খাদ্যের অভাবে হাতির পাল নেমে আসে লোকালয়ে । এদিকে কৃষকরা পাকা ধানক্ষেতসহ জান-মাল রক্ষায় মশাল, বল্লম ও পটকা নিয়ে বাধা দেতে গেলে বেঁধে যায় হাতি-মানুষের যুদ্ধ।
তাদের মাঝে চলে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া। এতে করে হাতির হামলায় মারা যায় কৃষক। কখনো আবার ধানের ক্ষেত রক্ষার জন্য দেওয়া বিদ্যুতের তারে জরিয়ে পড়ে মারা যায় হাতি। হাতি-মানুষ এ যুদ্ধ দীর্ঘদিনের।
গারো পাহাড়ে খাদ্য সংকটের কারনে ক্রমেই বাড়ে চলছে হাতি মানুষের যুদ্ধের মাত্রা।
স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছেন, হাতির আক্রমণে ক্ষয়ক্ষতি হলে ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে সরকার। রবিবার (১৭ নভেম্বর) সরেজমিনে ঘুরে স্থানীয় বাসিন্দা, কৃষক ও প্রশাসনসহ বিভিন্ন সূত্র থেকে এ তথ্য পাওয়া যায়।
আরো অনুসন্ধান করে জানা গেছে, শেরপুরের শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ীর সীমান্তের প্রায় ৪০ কিলোমিটারজুড়ে গারো পাহাড়। ভারতের মেঘালয় রাজ্য ঘেঁষা মেঘাদল, দীঘিলানা, হারিয়াকোনা, বাবেলাকোনা, চান্দাপাড়া, মালাকোচা, হালুহাটি, বড়ইকুচি, বালিজুরি, খ্রিস্টানপাড়া, খারামোরা, রাঙাজান, তাওয়াকোচা সহ প্রায় অর্ধশত গ্রাম রয়েছে।
১৯৯৫ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ওইসব গ্রামে হাতির আক্রমণে ৬০ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে শতাধিক। অপরদিকে বিদ্যুতের ফাঁদ সহ বিভিন্ন কারণে মৃত্যু হয়েছে ৩০টি হাতির । এর মধ্যে তিনটি হাতি হত্যার অভিযোগে মামলা হয়েছে। তবে বেশির ভাগ হাতির মৃত্যু হয়েছে বৈদ্যুতিক ফাঁদে, নয়তো বা ধারালো অস্ত্রের আঘাতে। হাতির সঙ্গে যুদ্ধ করে এখন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে গ্রামবাসীরা।
বন বিভাগ সূত্রে জান গেছে , গত বছরের ১৪ এপ্রিল ধানক্ষেত পাহারা দিতে গিয়ে বন্য হাতির হামলায় নিহত হয় শ্রীবরদীর ঝুলগাঁও গ্রামের রবিউল ইসলামের ছেলে কৃষক আব্দুল করিম (৩০)। আহত হয় কবির হোসেন (১৮)। হাতির তাড়া খেয়ে মো. আব্দুল হামিদ (৭০) নামে এক দর্শনার্থীর মৃত্যু হয় , তিনি গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর রাতে ঝুলগাঁও গ্রামে তাবলিগ জামায়াতে এলে এ ঘটনা ঘটে। তিনি সদর উপজেলার বাকারকান্দা এলাকার বাসিন্দা।
গত ৫ অক্টোবর ঝিনাইগাতীর গজনী গ্রাম থেকে এক বন্য হাতির মৃতদেহ উদ্ধার করেছে বন বিভাগ। গত ১ অক্টোবর নালিতাবাড়ী বাতকুচির গ্রামের ধানক্ষেতে বৈদ্যুতিক ফাঁদে একটি হাতির মৃত্যু হয়। এ নিয়ে ১০ বছরে ৩০টি বন্য হাতির মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে হাতির আক্রমণে ৬০ জন মারা যান। হাতি হত্যার ঘটনায় ২ বছরে তিনটি মামলা হয়েছে। বন বিভাগের তথ্যমতে এমন চিত্রই ফুটে উঠেছে ৷ এবিষয়ে স্থানিয় লোকজনের সাথে কথা বললে তারা জানান যে এব্যাপারে আমাদের সরকারি সহায়তা প্রোজন ৷
Leave a Reply