অনলাইন ডেস্কঃ
ফিলিস্তিনের গাজায় দীর্ঘ ১৫ মাস রক্তক্ষয়ের পর অবশেষে কার্যকর হতে যাচ্ছে যুদ্ধবিরতি চুক্তি। শুক্রবার ইসরাইলের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রিসভা এই চুক্তি অনুমোদন করেছে। রোববার থেকে যুদ্ধবিরতি শুরু হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।তবে যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে রাজি হওয়ার পরও গাজায় হামলা অব্যাহত রাখে ইসরাইলি বাহিনী। গাজার সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতির ঘোষণার পর থেকে শুক্রবার ভোর পর্যন্ত অন্তত ১০১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন আরও ২৬৪ জন।এরই মধ্যে বিরতি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে গাজাবাসীর মধ্যে উচ্ছ্বাস দেখা গেছে।নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রিসভার যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুমোদনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন ইসরাইলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হেরজগ। গতকালই পূর্ণ মন্ত্রিসভার এতে অনুমোদন দেওয়ার কথা ছিল। সে ক্ষেত্রে রোববার থেকে যুদ্ধবিরতি শুরু হবে বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে জানিয়েছেন তিনি। তবে চুক্তিটি ইসরাইলের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসবে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।যুদ্ধবিরতির এই চুক্তি যদি শেষ পর্যন্ত সফলভাবে বাস্তবায়ন শুরু হয়, তাহলে তা চরম বিভীষিকার মধ্যে থাকা গাজাবাসীর জন্য স্বস্তি নিয়ে আসবে। একই সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যে চলমান অস্থিতিশীলতাও কমে আসতে পারে। গাজা যুদ্ধ ঘিরেই লেবানন, ইয়েমেন ও ইরাকে হিজবুল্লাহ ও হুতির মতো ইরানপন্থি বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছে ইসরাইল।গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে ইসরাইল ও হামাসের ঐকমত্যের বিষয়টি গত বুধবার সামনে আনে মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতার। এরপর শুক্রবার নেতানিয়াহুর কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ইসরাইলের মন্ত্রিসভা ও সরকারের অনুমোদনের পর চুক্তি বাস্তবায়ন ও জিম্মিদের মুক্তির বিষয়টি পরিকল্পিত কাঠামো অনুযায়ী এগোবে। রোববার থেকে জিম্মি মুক্তি শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
গাজায় ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে চলা সহিংসতার শুরুর দিকে একবার মাত্র অল্প সময়ের জন্য যুদ্ধবিরতি হয়েছিল। এরপর যুদ্ধবিরতির জন্য দফায় দফায় আলোচনা হয়। তবে আশার আলো দেখা যায়নি। সম্প্রতি চুক্তির জন্য জোর তৎপরতার মধ্যে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হন হামাস ও ইসরাইলের প্রতিনিধিরা। তবে এ নিয়ে দ্বিমত প্রকাশ করেন ইসরাইল সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের অনেকে।মূল সমস্যাটা ইসরাইল সরকারের কট্টর ডানপন্থিদের। যেমন মন্ত্রিসভায় ভোটাভুটির মধ্য দিয়ে যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুমোদন পেলে পদত্যাগের হুঁশিয়ারি দেন জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন–গভির। একই ধরনের হুমকি দেন অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মরিচও। তবে কট্টরপন্থিদের বিরোধিতার পরও সরকারের মন্ত্রীদের বেশিরভাগই চুক্তির পক্ষে রয়েছেন বলেই নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তে দেখা গেছে।চুক্তি নিয়ে ইসরাইলের নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রিসভার ভোট বৃহস্পতিবার হওয়ার কথা ছিল। তবে হামাস চুক্তির কয়েকটি শর্ত মানতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে, এমন অভিযোগ তুলে তা এক দিন পেছানো হয়।
তিন ধাপে বিরতি কার্যকর : ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। ওই হামলায় ১ হাজার ২০০ জনের বেশি নিহত হন। জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয় আড়াইশর বেশি মানুষকে। তাদের মধ্যে অনেককে মুক্তি দিয়েছে হামাস। ইসরাইলের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী গাজায় হামাসের কাছে এখনও ৯৮ জন জিম্মি জীবিত অথবা মৃত অবস্থায় রয়েছেন।হামাসের ওই হামলার দিন থেকেই গাজায় নির্বিচারে আকাশ, স্থল ও জলপথে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। গাজা কর্তৃপক্ষের হিসাবে এই হামলায় এখন পর্যন্ত ৪৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১ লাখ ১০ হাজারের বেশি মানুষ। হামলা থেকে প্রাণ বাঁচাতে একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন গাজার ২৩ লাখ মানুষ।গাজায় যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়নের অপেক্ষায় রয়েছে, তা তিন ধাপে কার্যকর করা হবে। এর মধ্যে প্রথম ধাপ হবে ছয় সপ্তাহের। এসময় ৩৩ জন ইসরাইলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস। এর বিনিময়ে ইসরাইলি কারাগারে বন্দি থাকা ১৯ বছরের কম বয়সি নারী ও শিশুদের মুক্তি দেওয়া হবে। এসময় গাজা থেকে ইসরাইলি বাহিনীর একটি অংশকে সরিয়ে নেওয়া হবে।এরপর দ্বিতীয় ধাপে ইসরাইলের বাকি জীবিত জিম্মিদের মুক্তি দেবে হামাস। এর বিপরীতে আরও ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হবে এবং গাজা থেকে ইসরাইলি সেনাদের পুরোপুরি সরিয়ে নেওয়া হবে। আর তৃতীয় ধাপে ইসরাইলের কাছে মৃত জিম্মিদের মরদেহ ফেরত দেওয়া হবে এবং গাজা পুনর্গঠন শুরু হবে।
Leave a Reply