গোলাম আলী নাইম, ঢাকা বিশেষ প্রতিনিধি:
“আর্মি স্টেডিয়ামে কনসার্ট জুলাই আন্দোলনের শহীদদের পরিবারের জন্য করা হলেও এতে শহীদদের আত্মা শান্তি নয় বরং কষ্ট পাবে” বলে মনে মন্তব্য করেছেন কনসাস স্টুডেন্টস এন্ড ইয়ুথ জেনারেশন (সিএসওয়াজি) । আজ ২০ ডিসেম্বর, ২০২৪, রোজ- শুক্রবার বিকাল ৪:০০ টায় ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের ইসিবি চত্বরে এক সমাবেশে তারা এই মন্তব্য করেন। উল্লেখ, আগামী ২১ ডিসেম্বর ঢাকা আর্মি স্টেডিয়ামে জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবারের আর্থিক সহযোগীতার জন্য কনসার্টের আয়োজন করা হয়েছে, যেখানে গান গাইবে পাকিস্তানী গায়ক রাহাত ফতেহ আলী খান।সমাবেশে কনসাস স্টুডেন্টস এন্ড ইয়ুথ জেনারেশন (সিএসওয়াজি) এর আলোচকগণ বলেন, ইসলাম বিরোধী উপায়ে অনুষ্ঠান করলে কখনই শহীদদের আত্মা শান্তি পাবে না। শহীদদের নাম দিয়ে হারাম কাজ করলে তাদের আত্মাকে আরো কষ্ট দেয়া হবে। শহীদদের আত্মাকে যদি শান্তি দিতে হয়, তবে অনুষ্ঠানকে অবশ্যই অশ্লীলতা, মাদক ও বাদ্যযন্ত্রমুক্ত রাখতে হবে, শরীয়ত বিরোধী কোন কাজ করা যাবে না।
সিএসওয়াজি’র আলোচকগণ বলেন, আর্মি স্টেডিয়ামের খুব নিকটে ৩টি কবরস্থান আছে। কবরস্থানগুলো হলো- সেনা কবরাস্থান, বনানী সামরিক গোরস্থান এবং বনানী কবরাস্থান। আর্মি স্টেডিয়ামে যখন উচ্চস্বরে কনসার্টে গান-বাজনা হয়, তখন তার শব্দে কবরাস্থান এলাকাসহ কাপতে থাকে। কোন কবরাস্থান এলাকায় উচ্চ স্বরে গান-বাজনা হলে ঐ কবরবাসীদের কষ্ট হয়। কবরবাসীদের আত্মাকে কষ্ট দিয়ে কনসার্ট কখনই মেনে নেয়া যায় না। তাই আর্মি স্টেডিয়ামে অবশ্যই হারাম গান-বাদ্য বন্ধ হওয়া উচিত।সিএসওয়াজি’র আলোচকগণ বলেন, সেনা ক্রীড়া নিয়ন্ত্রণ বোর্ড গত ১১ই ডিসেম্বর, ২০২৪ তারিখে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে যে সকল শর্তে অনুষ্ঠান আয়োজক কোম্পানি ‘স্কাই ট্র্যাকার লিমিটেড’কে স্টেডিয়াম বরাদ্দ দিয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো “স্টেডিয়ামের অভ্যন্তরে কোন ধরনের অশালীন কার্যক্রম চলতে পারবে না।” সিএসওয়াজি’র আলোচকগণ বলেন, কনসার্টে পুরুষ ও মহিলা দর্শককে একত্র রাখা হবে কিন্তু সেখানে অশালীন কিছু ঘটবে না, এটা কখনই বাস্তবসম্মত চিন্তা না। অনুষ্ঠানকে অশালীনতামুক্ত রাখতে হলে অবশ্যই পুরুষ-নারী দর্শকের স্থান আলাদা করতে হবে।
সিএসওয়াজি’র আলোচকগণ বলেন, গান-বাদ্য-বাজনা অশ্লীলতাকে উস্কে দেয়। আর কনসার্টের মাধ্যমে সেটাই করা হয়। তাই গান-বাদ্য-বাজনা দিয়ে অনুষ্ঠানস্থল অশ্লীলতামুক্ত রাখা সম্ভব না। সিএসওয়াজি’র আলোচকগণ বলেন, আর্মি স্টেডিয়ামে পাকিস্তান থেকে আতিফ আসলাম বা রাহাত ফতেহ আলী খানকে আনা হচ্ছে। পাকিস্তানের এইসব গায়ক খুব সুন্দর হামদ শরীফ, নাত শরীফ, ক্বাসিদা শরীফ তথা সামা শরীফ পাঠ করতে পারেন। এইসব পাকিস্তানী পাঠকদের মাধ্যমে সুন্দর হামদ শরীফ, নাত শরীফ, ক্বাসিদা শরীফ তথা সামা শরীফের আয়োজন করা হলে অশ্লীলতাও ঘটবে না, আবার শহীদদের আত্মাও শান্তি পাবেন। বাংলাদেশে এই হামদ শরীফ, নাত শরীফ ও ক্বাসিদা শরীফ তথা সামা শরীফের চাহিদা বর্তমানে প্রচুর। পাকিস্তানসহ অনেক দেশেই হামদ শরীফ, নাত শরীফ ও ক্বাসিদা শরীফ তথা সামা শরীফের অনুষ্ঠানের টিকিট বিক্রি করে ‘চ্যারিটি ফান্ড’ সংগ্রহ করা হয়, যা সম্পূর্ণ হালাল ও শরীয়ত সম্মত পদ্ধতি। কিন্তু বাংলাদেশে হারাম ও শরীয়ত বিরোধী কাজের মাধ্যমে চ্যারিটি ফান্ড সংগ্রহ করা হয়। এ ধরনের ইসলাম বিরোধী সংস্কৃতি থেকে আমাদের সরে আসতে হবে।সিএসওয়াজি’র আলোচকগণ বলেন, ভেন্যু বরাদ্দ দিতে যে সমস্ত শর্ত দেয়া হয়েছে তার মধ্যে আরো একটি উল্লেখযোগ্য শর্ত হচ্ছে, স্টেডিয়ামের ভেতর মাদক বহন ও সেবন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আলোচকগণ বলেন, অনুষ্ঠানের প্রবেশস্থলে কড়া তল্লাশী এবং মাদক পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক দণ্ড দেয়া ছাড়া এই শর্ত সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হবে না। তাই অনুষ্ঠান প্রবেশস্থলে মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর তল্লাশী এবং তাৎক্ষণিক দণ্ড দেয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে।‘সিএসওয়াজি’র আলোচকগণ বলেন, ভেন্যু বরাদ্দ দেয়ার আরেকটি শর্ত হচ্ছে “ঢাকা–ময়মনসিংহ মহাসড়ক সম্পূর্ণ যানজট মুক্ত রাখতে হবে”। কিন্তু এই শর্তও সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হবে না, যদি না গাড়ি পার্কিং এর জন্য আলাদা ব্যবস্থা না করা হয়। ক্যান্টনমেন্ট বা তার আশে-পাশে বড় এলাকায় পৃথক পার্কিং এর ব্যবস্থা রাখলেই কেবল এই শর্ত বাস্তবায়ন সম্ভব।
সমাবেশে কনসাস স্টুডেন্টস এন্ড ইয়ুথ জেনারেশন (সিএসওয়াজি) এর শতাধিক সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply