সোহাগ কাজী, মাদারীপুর জেলা প্রতিনিধি:
মাদারীপুরে ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ১০ বেডের আইসিইউ থাকলেও সেবা পাচ্ছে না মুমূর্ষু রোগীরা। সরকার লোকবল না দেয়ার কারণে ১০ বেডের আইসিইউ ইউনিট চালু করা সম্ভব হচ্ছে না বলে দাবি জেলার সিভিল সার্জনের।
হাসপাতালের আইসিইউ ইউনিটটি চালু থাকলে মুমূর্ষু রোগীদের চিকিৎসা দেয়া সম্ভব বলে দাবি কর্মরত ডাক্তারদের।
অনেক মুমূর্ষু রোগীকে ঢাকা, বরিশাল বা ফরিদপুর নেয়ার পথেই মারা যায়। আইসিইউ ইউনিট চালু থাকলে মুমূর্ষু রোগীদের বাঁচাতে শেষ চেষ্টা করতে পারতো স্বজনরা। সরকার এই ইউনিটে লোকবল না দিয়ে মুমূর্ষু রোগীদের যেমন চিকিৎসাসেবা বঞ্চিত করছে তেমনি কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি ফেলে রেখে নষ্ট করছে বলে অভিযোগ মাদারীপুরবাসীর।
মানুষ যখন কোন রোগাক্রান্ত হয়ে বেঁচে থাকার সক্ষমতা হারায় তখন প্রয়োজন হয় আইসিইউ’র। লাইফসাপোর্ট দিয়ে সেই রোগীকে বাঁচিয়ে রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়। কোটি টাকার যন্ত্রপাতি দিয়ে সাজানো থাকে আইসিইউ’র প্রতিটি বেড। প্রয়োজন হয় অভিজ্ঞ চিকিৎসক ও নার্সের।
২৪ ঘণ্টা রাখতে হয় নিবিড় পর্যবেক্ষণে। রাজধানী ঢাকার বাহিরে হাতে গোনা কয়েকটি জেলায় আইসিইউ’র ব্যবস্থা আছে। সরকারি আইসিইউগুলোতে খরচ কম হলেও বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউগুলো চিকিৎসা করতে সহায়সম্বল সবই বিক্রি করতে হয়। বেসরকারি হাসপাতালগুলোর আইসিইউতে চিকিৎসা নিতে প্রতিদিনের জন্য দিতে হয় ৬০ হাজার টাকা থেকে আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত। বেসরকারি হাসপাতালগুলো অবলীলায় আইসিইউতে চিকিৎসা দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে রোগীদের কাছ থেকে। অথচ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় একাধিক বেডের আইসিইউ থাকলেও লোকবল সংকট দেখিয়ে বন্ধ রেখেছে আইসিইউ ইউনিটগুলো। পড়ে থেকে কোটি কোটি টাকার আইসিইউ’র যন্ত্রপাতিগুলো নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সেই সাথে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শত শত মুমূর্ষু রোগী। ঝরে যাচ্ছে অনেক তাজা প্রাণ।
মাদারীপুর (প্রা.) অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বলেন, মাদারীপুর থেকে প্রায়ই মুমূর্ষু রোগী নিয়ে ঢাকা, বরিশাল বা ফরিদপুর নিয়ে যায় আমাদের অ্যাম্বুলেন্সগুলো। এরমধ্যে বেশিরভাগ রোগীর এতটা খারাব থাকে যে তাদের নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছার আগেই মারা যায়। যদি মাদারীপুর ২৫০ বেডের হাসপাতালে ১০ বেডের আইসিইউ ইউনিটটি লোকবল দিলে চালু করতো তাহলে হয়তো অনেক জীবন বেঁচে যেতো।
স্থানীয় লোকজন অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, সরকারি হাসপাতালগুলোতে এমনিতেই চিকিৎসা পেতে কষ্ট হয়। তারপর যদি লোকবল কম তাহলে আমাদের মতো সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে। এছাড়া কোন রোগীর অবস্থা একটু খারাব হলেই তাকে ঢাকা, বরিশাল বা ফরিদপুরে রেফার করে দেয়। অনেক রোগীই রেফার করা হাসপাতালে যাওয়ার আগেই এ্যাম্বুলেন্সে মারা যায়। আগে ১০০ বেডের হাসপাতাল ছিল। পরে ২৫০ বেডে উন্নত করা হয়। ২৫০ বেডের হাসপাতাল চালু হলেও চিকিৎসা দিচ্ছে ১০০ বেডের হাসপাতালের মতোই। জিজ্ঞেস করলে বলে, ডাক্তারসহ অনেক লোক কম আছে তাই এই অবস্থা। আবার ১০ বেডের আইসিইউ এসেছে শুনেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত চালু হয়নি। মাদারীপুর জেলাসহ আশেপাশের জেলাগুলোতেও আইসিইউ নেই। আর মাদারীপুর আইসিইউ চালু হলে এ অঞ্চলের রোগীদের জন্য অনেক ভাল হবে।
মাদারীপুর ২৫০ বেড হাসপাতালে ১০ বেডের আইসিইউ ইউনিট থাকলেও এখন পর্যন্ত চালু না হওয়ায় জেলার জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গসহ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দায়ী করলেন মাদারীপুরে কর্মরত চিকিৎসক ডা. শিবলী মাহরিয়ার মঞ্জু।
তিনি বলেন, মাদারীপুরে আইসিইউ ব্যবস্থা না থাকার কারণে গুরুতর রোগীদের আমরা চিকিৎসা দিতে সাহস পাই না। কারণ এসকল রোগীদের ক্ষেত্রে যে কোন সময় আইসিইউ’র প্রয়োজন হতে পারে। তার রোগীর অবস্থা গুরুতর হলেই আমরা ঢাকাসহ, বরিশাল, ফরিদপুর রেফার করি। এতে রোগীরা কষ্ট পায় এমনকি অনেক সময় পথেই মারা যায়। এছাড়াও রোগীর পরিবারের কষ্টের মাত্রা বেড়ে যাওয়াসহ আর্থিকভাবেও অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দ্রুত লোকবল দিয়ে মাদারীপুর ১০ বেডের আইসিইউ ইউনিটটি চালু করার জন্য সরকার ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে দাবি জানাচ্ছি।
মাদারীপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. মুনির আহমদ খান বলেন, ১০০ বেডের হাসপাতালের চেয়েও কম লোকবল দিয়ে ২৫০ বেডের হাসপাতাল চালাচ্ছি। লোকবল সংকটে সাধারণ চিকিৎসা দিতেই হিমশিম খাচ্ছি। এরপর এখানে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি দিয়ে ১০ বেডের আইসিইউ ইউনিট স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু এখানে কোন লোকবল দেয়া হয়নি। তাই এই ইউনিটটি এখন পর্যন্ত চালু করা সম্ভব হয়নি। আমি একাধিকবার হাসপাতালসহ আইসিইউ ইউনিটে লোকবল চেয়ে চিঠি দিয়েছি এখনও পাইনি। আইসিইউ ইউনিটটি রোগীদের সেবা দিতে প্রস্তুত আছে। লোকবল পেলেই ইউনিটটি চালু করা হবে।
Leave a Reply