গোলাম আলী নাইম – ঢাকা বিশেষ প্রতিনিধি:-
বাংলাদেশের ই-পাসপোর্টে ‘এক্সেপ্ট ইসরাইল’ অংশ ফিরিয়ে আনার দাবীতে সমাবেশ করেছে ইন্তিফাদা ফাউন্ডেশন। আজ ২৩ মার্চ, ২০২৫ ইং তারিখ, রোজ-রবিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগর আগারগাঁওয়ে জাতীয় ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সামনে এক সমাবেশে তারা এ দাবী জানান।
সমাবেশে মূল বক্তব্য পাঠ করেন ইন্তিফাদা ফাউন্ডেশনের প্রেসিডিয়াম সদস্য মুহাম্মদ রিফাতুল ইসলাম। এছাড়া অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন আমজনতার দলের সভাপতি মুহম্মদ তারেক রহমান, সিয়ান পাবলিকেশনের কর্ণধার আবু তাসমিয়া আহমদ রফিক, ইনকিলাব মঞ্চের সভাপতি শরীফ ওসমান হাদী, স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’র যুগ্ম আহবায়ক মুহিউদ্দিন রাহাত, বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদ সহ আরো অনেকে।
সমাবেশে বক্তাগণ বলেন, কমপক্ষে ১২টি দেশের পাসপোর্টে ইসরাইল ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আছে। এর মধ্যে মালয়েশিয়া, লিবিয়া ও পাকিস্তানী পাসপোর্টে সরাসরি ইসরাইলের নামে লিখিত নিষেধাজ্ঞা আছে। তবে লিবিয়া তার পাসপোর্টে ‘ইসরাইল’ নামটিকেও স্বীকৃতি দেয়নি। সেখানে ‘ইসরাইল’ শব্দের পরিবর্তে ‘দখলকৃত ফিলিস্তিন’ লেখা হয়।
সমাবেশে বক্তাগণ বলেন, বাংলাদেশি নাগরিকদের পাসপোর্টেও একসময় লেখা থাকতো- ‘দিস পাসপোর্ট ইজ ভ্যালিড ফর অল কান্ট্রিজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড এক্সসেপ্ট ইসরায়েল’। কিন্তু পতিত আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে ২০২১ সালে ই-পাসপোর্টে তা পরিবর্তিত করে “ভ্যালিড ফর অল কান্ট্রিজ” লিখে পাসপোর্টে ইসরাইল ভ্রমণে লিখিত নিষেধাজ্ঞা তুলে দেয়া হয়।
সমাবেশে বক্তাগণ বলেন, ২০২১ সালের এ সংবাদ দখলদার ইসরাইল আনন্দ প্রকাশ করে এবং অবৈধ রাষ্ট্রটির বৈদেশিক মন্ত্রনালয়ের রুথ জাক এবং গিলাড কোহেনের মত একাধিক কর্মকর্তা বিষয়টিকে স্বাগত জানায় এবং বাংলাদেশের সাথে ইসরাইলের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের প্রথম ধাপ হিসেবে ঘটনাটিকে উল্লেখ করে। সমাবেশে বক্তাগণ আরো বলেন, যে খুনি ইসরাইলের হাতে লক্ষ লক্ষ ফিলিস্তিনি নিরাপরাধ শিশুর রক্ত লেগে আছে, সেই খুনির সাথে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের নূন্যতম চেষ্টাও আমরা মেনে নেবো না। পতিত আওয়ামীলীগ সরকারকে যেভাবে ছুড়ে ফেলা হয়েছে, আমাদের দাবী হচ্ছে, আওয়ামলীগ আমলে তৈরী করা সেই পাসপোর্টও ছুড়ে ফেলা হোক এবং পুনরায় পাসপোর্টে ‘এক্সেপ্ট ইসরাইল’ অংশ ফিরিয়ে আনা হোক।
সমাবেশে বক্তাগণ বলেন, ‘এক্সসেপ্ট ইসরায়েল’ অংশ বাদ দেয়ার সময় গত সরকারের দাবী ছিলো, আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতেই নাকি এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অথচ আন্তর্জাতিক মানের সাথে ‘এক্সেপ্ট ইসরায়েল’ অংশ রাখা কিংবা না রাখার মধ্যে কোন সম্পর্ক নেই। যেমন- গ্লোবাল পাসপোর্ট পাওয়ার র্যাঙ্ক ২০২৫ অনুসারে ‘এক্সেপ্ট ইসরায়েল’ অংশ থাকার পরও মালয়েশিয়ার পাসপোর্টের অবস্থান ৭ নম্বরে, অথচ ‘এক্সেপ্ট ইসরায়েল’ অংশ বাদ দেয়ার পরও বাংলাদেশের অবস্থান ৮৮ নম্বরে। অর্থাৎ পতিত আওয়ামী সরকার সম্পূর্ণ মিথ্যা দাবী করে ‘এক্সেপ্ট ইসরায়েল’ সরিয়ে ফেলে।
সমাবেশে বক্তাগণ বলেন, ট্রেডিং ইকোনোমিকস ওয়েবসাইটের তথ্য মতে বাংলাদেশের সাথে দখলদার ইসরাইলের মধ্যে বর্তমানে বাণিজ্য অব্যাহত আছে। তারা বলেন, যে উপায়েই হোক অথবা যত সামান্যই হোক দখলদার ইসরাইলের সাথে পণ্য আমদানি-রফতানির ঘটনা খুবই উদ্বেগজনক বিষয়। কারণ এর মাধ্যমে দখলদার ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়ার অর্থনৈতিক অজুহাত তৈরী হতে পারে। তাই ইসরাইলের সাথে সামান্যতম আমদানি-রফতানিও বন্ধ করার দাবী জানান তারা।
সমাবেশে বক্তাগণ বলেন, রক্ত পিপাসু ইসরাইল গাজায় প্রতিনিয়ত গণহত্যা চালাচ্ছে। গাজার অধিবাসীরা খাদ্য ও তীব্র ঔষধ সংকটে আছে। বর্তমানে বাংলাদেশের সাথে যদি গাজা বা তার কর্তৃপক্ষ হামাসের সাথে সম্পর্ক থাকতো, তবে বাংলাদেশীরা খুব সহজেই সেখানে সহযোগীতা প্রেরণ করতে পারতো। সমাবেশে গাজা’র সাথে রাষ্ট্রীয় সম্পর্ক স্থাপনে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি দাবী জানান বক্তাগণ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, খুনি ও দখলদারের কোন ভূমি অধিকার থাকতে পারে না। ইসরাইল দখলদার, সে ফিলিস্তিন ভূমির কেউ নয়। তাই টু-স্টেট সল্যুশন নয়, বরং সম্পূর্ণ ভূমির মালিকানা ফিলিস্তিনীদেরকে বুঝিয়ে দিতে হবে।
সমাবেশে বক্তাগণ বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রো-ইসরাইলি কোম্পানির সকল পণ্যসহ আওয়ামী আমলে ক্রয়কৃত নজরদারী প্রযুক্তি পেগাসসকে নিষিদ্ধের দাবী তুলেন। পাশাপাশি ১৯৬৭ সালে আরব-ইসরাইল যুদ্ধে সর্বোচ্চ ইসরাইলি বিমান ভূপাতিত করার রেকর্ডধারী বাংলাদেশী বৈমানিক সাইফুল আজমের নাম ও বিমানের ছবিকে পাসপোর্টের জলচ্ছাপে অন্তর্ভুক্ত করার দাবী জানান।
সমাবেশে ইন্তিফাদা ফাউন্ডেশনের শতাধিক সদস্যসহ অন্যান্য অতিথি দলের নেতা-কর্মীগণ উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply