ডেইলি নিউজ বাংলা ২৪ ডেক্স:
কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলায় অবৈধ রেল ক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৭ এ দাড়িয়েছে। নিহতদের মধ্যে অটোরিকশার চালক ছাড়াও রয়েছেন চারজন নারী। এ ঘটনায় আরো একজন গুরুতর আহত রয়েছেন বলে জানা গেছে।
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে উপজেলার বাকশিমূল ইউনিয়নের কালিকাপুর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
অটোচালকের অদক্ষতার কারণেই এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা রেলওয়ে পুলিশের। এ ঘটনায় চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ে। এছাড়া নিহতদের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে সহায়তা দেবে উপজেলা প্রশাসন।
নিহতরা হলেন, উপজেলার বাকশিমূল গ্রামের তৈয়ব আলীর ছেলে অটোরিকশা চালক সাজু মিয়া (৩৮), মৃত মুনসুর আলীর ছেলে আলী আহমেদ (৮০), মৃত আবদুল খালেকের স্ত্রী লুৎফা বেগম (৫৫), মনির হোসেনের স্ত্রী শাহিনুর আক্তার শানু (৩৫), আলী আশরাফের স্ত্রী সফরজান বেগম (৬৫), পাশের খোদাইধুলি গ্রামের প্রয়াত আছমত আলীর ছেলে রফিস মিয়া (৬০) এবং প্রয়াত ফজলু মিয়ার স্ত্রী হোসনেয়ারা বেগম(৬৫)
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এ আর বিজয় বলেন, ট্রেনটি হুইসেল দিয়েই আসছিল। কিন্তু এরপরও সাজু মিয়া অটোরিকশা নিয়ে রেললাইনে উঠে পড়েন। তিনি হয়তো ভেবেছিলেন পার হতে পারবেন, কিন্তু সেটি আর সম্ভব হয়নি। ঘটনার পর মরদেহগুলো রেললাইন পড়েছিল।
পরে নিহতদের পরিবারের লোকজন এসে মরদেহের বিচ্ছিন্ন অংশগুলো তুলে নিয়ে যায়।
নিহতদের মধ্যে শাহিনুর আক্তার শানু অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন বলে জানিয়েছেন তার স্বামী মনির হোসেন। তিনি বলেন, ‘কয়েকদিন পরেই আমাদের ঘর আলোকিত করে নতুন অতিথি আসার কথা ছিল। এর আগেই সব শেষ হয়ে গেল। আমার স্ত্রীর সঙ্গে মারা গেলো সন্তানও।
নিহত বাকি ছয়জনের বাড়িতেও এখন শোকের মাতম বইছে। প্রিয় স্বজনকে এভাবে হারিয়ে প্রতিটি পরিবারের সদস্যরা দিশেহারা। এমন দুর্ঘটনায় গ্রামের মানুষও শোকাহত। ওই স্থানে বৈধ রেলগেট নির্মাণ করে গেটম্যান নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী সহ নিহতদের পরিবার। কুমিল্লা রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক মোস্তফা কামাল বলেন, ‘মঙ্গলবার সকালে সাজু মিয়ার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় করে নিহতরা সকলেই বাকশিমূল গ্রাম থেকে পাশের গাজিপুর বাজারে যাচ্ছিলেন। এ সময় চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনের সামনে হঠাৎ চলে আসায় যাত্রীবাহী অটোরিকশাটি ট্রেনের ধাক্কায় দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এতে প্রথমে পাঁচজন এবং পরে আরো দুইজনসহ সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় গুরুতর আহত আরো এক ব্যক্তির অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকে কুমিল্লা ট্রমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জেনেছি।’
কুমিল্লার ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী (পথ) লিয়াকত আলী মজুমদার বলেন, ঘটনাটি মর্মান্তিক। দুর্ঘটনার পরপরই পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রেলওয়ে কুমিল্লার সিনিয়র নির্বাহী প্রকৌশলীকে। আর বাকি তিন সদস্য হলেন পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের। তাদেরকে দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত কাজ শেষ করে দুর্ঘটনার পেছনের কারণ বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপককে জানাতে বলা হয়েছে। বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাহিদা আক্তার বলেন, ‘নিহতদের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে সহায়তা দেওয়া হবে। এবং আমরা এ বিষয়ে খোঁজ খবর রাখছি।’
Leave a Reply