মো: ইস্রাফিল হোসেন, যশোর ঝিকরগাছা উপজেলা প্রতিনিধি:
শীতের আমেজ আসতে না আসতেই খেজুর গুড়ের রাজধানী খ্যাত যশোরের বিভিন্ন এলাকায় পুরোদমে চলছে রস সংগ্রহের প্রস্তুতি। ইতোমধ্যেই খেজুর গাছ কাটার পূর্ব প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছেন গাছিরা।
যশোরের যশ খেজুরের রস শুধু কথায় নয় কাজেও। প্রবাদ বাক্যটি আজও রয়েছে মুখে মুখে। শীতের আমেজ শুরু হয়েছে। তাই প্রতি বছরের মত যশোর অঞ্চলের গাছিরা রস সংগ্রহের জন্য ব্যস্ত সময় পার করছেন। গ্রাম বাংলার মাঠে-ঘাটে এখন চোখে পড়ছে গাছ তোলা-চাঁছার দৃশ্য। গাছিরা খেজুর গাছ থেকে রস বের করার জন্য শুরু করেছেন প্রাথমিক কাজকর্ম। গাছিরা হাতে দা নিয়ে ও কোমরে ডোঙ্গা বেঁধে নিপুন হাতে গাছ চাঁছা-ছোলা করছে। খেজুরের রস সংগ্রহের সকল পূর্বপ্রস্তুতি শেষ করে গাছের রস সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত থাকবেন। গছিরা এখন মাঠে মাঠে মহাব্যস্ত সময় পার করছেন।
বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, গাছিরা খেজুর গাছ কাটার জন্য দা, দড়িসহ মাটির ঠিলে ক্রয় করা ও বাড়ির গৃহিণীরা রস জ্বালানো চুলা তৈরি করতে ব্যস্ত। কিছু দিন পরে গৌরব ও ঐতিহ্যের প্রতীক মধুবৃক্ষ থেকে সুমধুর রস বের করে গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে শুরু হবে নতুন গুড়, পাটালী, পিঠা-পায়েস, মুড়ি-মুড়কি ও নানা রকমের মুখরোচক খাবার তৈরির উৎসব।
প্রাকৃতিক উপাদানে ভরপুর খেজুরের রস মানুষের শরীরে অন্যরকম অনুভূতি জাগিয়ে তোলে। কিন্তু লোভনীয় এ পানীয় জলের প্রাপ্তি উৎস খেজুর গাছ প্রায় বিলুপ্তির পথে। পাশাপাশি বিলুপ্তি হচ্ছে গাছি। যশোরের যশ খেজুরের রস এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে তা না হলে কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাবে বলে জানান গাছিরা।
গাছি মন্টু মিয়া জানান, গাছ তোলার ৮ থেকে ১৪ দিন পর নোলন দেওয়ার মাধ্যমে শুরু হবে মজাদার খেজুর রস আহরণের কাজ। তার কিছুদিন পরই গাছে লাগানো হবে মাটির ঠিলা। সংগ্রহ করা হবে মিষ্টি স্বাদের খেজুরের রস। তা দিয়ে তৈরি হবে গুড়, পাটালি, পায়েস ও নানা ধরণের সুস্বাদু পিঠা ।
গাছি ইব্রাহিম জানান, কয়েক বছর আগেও গ্রাম গঞ্জে খেজুরের গাছের অভাব ছিল না। গাছি ছিল অনেক। এখন আর আগের মত কোন কিছুই নেই। আস্তে অস্তে সব হারিয়ে যাচ্ছে। গাছির অভাবে অনেকে খেজুর গাছ বিক্রি করে দিচ্ছে। খেজুর গাছও কমে গেছে। এখন আর আগের মত শীত নেই। রসও তেমন হয় না তাই গাছিরা পেশা পরিবর্তন করে অন্য পেশায় নিয়োজিত হচ্ছেন।
যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (উদ্যান) প্রতাপ মণ্ডল বলেন, যশোরের খেজুর রস ও গুড়ের সুনাম ধরে রাখতে কাজ করছে কৃষি বিভাগ। কৃষকদের উৎসাহ দেয়ার পাশাপাশি প্রতিবছর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নতুন নতুন গাছি তৈরি করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে চার শতাধিক গাছিকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। চলতি মৌসুমেও ১’শ জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। পাশাপাশি নতুন করে খেজুরের বীজ বপন করা হচ্ছে। এর ফলে রস আহরণ ও গুড় তৈরির পরিমাণ বাড়বে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, যশোরে ১৭ লাখ ২৩ হাজার ৪৮০টি খেজুর গাছ রয়েছে। এরমধ্যে রস আহরণযোগ্য গাছের পরিমাণ চার লাখ দুই হাজার ৪৩৫টি। এর মধ্যে তিন লাখ ৪ হাজার ৫টি গাছ থেকে ৫ হাজার ১২৫ জন গাছি রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরির কাজ করবেন।
Leave a Reply