ডেস্ক নিউজ
শীতকাল শেষের পথে, প্রকৃতিতে লেগেছে গরমের ছোঁয়া। বসন্তের মৃদু শীতল বাতাস থাকলেও দুপুরের রোদ জানান দিচ্ছে, গ্রীষ্ম দরজায় কড়া নাড়ছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তাপমাত্রা বেড়ে গেছে, বিশেষ করে নগরাঞ্চলে এই পরিবর্তন স্পষ্ট। গরমের এই শুরুতে জনজীবনেও কিছুটা পরিবর্তন এসেছে, বেড়েছে সতর্কতা ও প্রস্তুতির প্রয়োজনীয়তা।
শীত থেকে গরমের পথে প্রকৃতি:
ফেব্রুয়ারির শেষভাগ থেকে দেশের তাপমাত্রার পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে। আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েক দিনে তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁয়ে ফেলেছে কিছু এলাকায়। সকালে ও রাতে এখনও কিছুটা ঠান্ডা অনুভূত হলেও দিনের বেলা বেশ গরম লাগছে। ঢাকার রাস্তায় দুপুরের দিকে বের হলে ত্বকে রোদের চড়া তাপ স্পষ্টভাবে বোঝা যায়।
চট্টগ্রাম ও খুলনার মতো উপকূলীয় অঞ্চলে বাতাসে আর্দ্রতা বেড়েছে, ফলে স্যাঁতসেঁতে গরমের অনুভূতি বাড়ছে। রাজশাহী, রংপুর, যশোর, ময়মনসিংহের মতো উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলে শুষ্ক গরমের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। পাহাড়ি অঞ্চল বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতেও দিনের তাপমাত্রা বাড়ছে, যদিও রাতের দিকে এখনো কিছুটা ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে।
জনজীবনে পরিবর্তন:
শীতের পোশাক প্রায় বিদায় নিয়েছে। সকালে কিংবা রাতে হালকা গরম কাপড় দেখা গেলেও দিনের বেলা হাফহাতা পোশাক, ছাতা ও সানগ্লাসের ব্যবহার বেড়ে গেছে। অফিসগামী মানুষ, রিকশাচালক, শ্রমিক—সবাই এখন দুপুরের রোদ থেকে বাঁচতে একটু ছায়ার খোঁজ করছেন।
স্কুলগামী শিশুদের জন্য গরমের প্রভাব বেশি অনুভূত হচ্ছে। সকালবেলা ক্লাসে যাওয়ার সময় আবহাওয়া আরামদায়ক থাকলেও ফিরে আসার সময় তাপমাত্রা বাড়তে থাকে, যা শিশুদের জন্য কিছুটা অস্বস্তিকর হয়ে উঠছে।
বাজারেও গরমের ছোঁয়া স্পষ্ট। শীতের শাক-সবজি কমতে শুরু করেছে, গ্রীষ্মকালীন ফলমূলের দেখা মিলছে। তরমুজ, বেল, আমের মুকুল গাছের ডালে জানান দিচ্ছে আসন্ন গ্রীষ্মের।
স্বাস্থ্য ও সতর্কতা:
গরমের এই আগমনী বার্তায় সতর্কতা নেওয়া জরুরি। বিশেষজ্ঞদের মতে, তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের পানির চাহিদাও বাড়ে। তাই শরীর সুস্থ রাখতে পর্যাপ্ত পানি পান করা, স্যালাইন ও তরল খাবার গ্রহণ করা দরকার।
তীব্র রোদে হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি থাকে, বিশেষ করে বয়স্ক ব্যক্তি ও শিশুদের জন্য এটি বেশি ক্ষতিকর হতে পারে। তাই দুপুরের প্রচণ্ড রোদে কম বের হওয়া ভালো। বাইরে গেলে ছাতা বা টুপি ব্যবহার করতে হবে, পাশাপাশি সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে বাঁচতে সানগ্লাস পরার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রকৃতি ও কৃষির ওপর প্রভাব:
শীত বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতির রং বদলাতে শুরু করেছে। গাছের ডালে নতুন সবুজ পাতা এসেছে, তবে মাটিতে শুষ্কতার ছাপ পড়তে শুরু করেছে। নদী ও খাল-বিলের পানি কমতে শুরু করেছে, যা কৃষিতে প্রভাব ফেলতে পারে।
বোরো ধান চাষের জন্য পর্যাপ্ত পানি প্রয়োজন হয়, তাই সেচ ব্যবস্থা ভালো রাখতে হবে। পাশাপাশি, আবহাওয়ার পরিবর্তনের ফলে কিছু এলাকায় ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে, যা ফসলের ক্ষতি করতে পারে। কৃষকদের এ বিষয়ে আগেভাগে প্রস্তুতি নিতে হবে।
শীতের কোমল স্পর্শ এখন অতীত। বসন্তের রঙিন আবহ থাকলেও গরমের উপস্থিতি স্পষ্ট হয়ে উঠছে। প্রকৃতি জানিয়ে দিচ্ছে, গ্রীষ্মকাল খুব বেশি দূরে নয়। তাই এখন থেকেই গরম মোকাবিলার প্রস্তুতি নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। পর্যাপ্ত পানি পান, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, সঠিক পোশাক এবং গরম থেকে রক্ষার অন্যান্য ব্যবস্থা নিয়ে গ্রীষ্মকে স্বাগত জানানোই হবে সুস্থ থাকার চাবিকাঠি।
Leave a Reply