মোঃমোরছালিন জয়পুরহাট প্রতিনিধি:
জয়পুরহাট জেলার ক্ষেতলাল উপজেলার হিন্দা গ্রামে অবস্থিত হিন্দা-কসবা শাহী জামে মসজিদ বাংলাদেশের ইসলামী স্থাপত্যশিল্পের এক অনন্য নিদর্শন। জেলা সদর থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই মসজিদটি স্থানীয় বাসিন্দা এবং দেশ-বিদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমান ও ঐতিহ্যপ্রেমী পর্যটকদের মুগ্ধ করে চলেছে।
মসজিদটির দেয়ালে কাচ, চিনামাটি ও মোজাইকের মনোমুগ্ধকর সমন্বয়ে মোগল স্থাপত্যের প্রভাব স্পষ্ট। এর জ্যামিতিক নকশা, চিত্তাকর্ষক আলংকারিক কাজ এবং রঙিন ডিজাইন মসজিদটিকে অনন্যতা দিয়েছে। পাঁচটি গম্বুজ মসজিদটির ছাদকে শোভিত করেছে, যা ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের প্রতীক হিসেবে ধরা হয়।
বাংলা ১৩৬৫ সালে (১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দ) নির্মিত এই মসজিদটি বাগমারী পীর নামে পরিচিত হযরত আবদুল গফুর চিশতি (রহ.)-এর পরিকল্পনায় এবং তাঁরই খলিফা আবদুল খালেক চিশতির তত্ত্বাবধানে নির্মিত হয়। এই সাধক জয়পুরহাট জেলায় বহু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নির্মাণে অবদান রেখেছেন।
মসজিদের অভ্যন্তরীণ কক্ষটি দৈর্ঘ্যে ৪৯.৫০ ফুট এবং প্রস্থে ২২.৫০ ফুট। এর উত্তরে ৪০ ফুট উচ্চতার একটি সুউচ্চ মিনার রয়েছে, যা মসজিদটির সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। দূর থেকে এই মিনার দর্শনার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
মসজিদের পাশে রয়েছে চারজন সুফি সাধকের মাজার। ধর্মপ্রাণ মানুষের কাছে এটি অত্যন্ত পবিত্র এবং তাৎপর্যপূর্ণ স্থান। প্রতিদিনই বহু মানুষ এখানে মাজার জিয়ারত করতে আসেন, যা মসজিদ ও এর পারিপার্শ্বিক এলাকাকে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।
হিন্দা-কসবা শাহী জামে মসজিদ শুধু ধর্মীয় উপাসনার স্থান নয়, এটি জয়পুরহাট জেলার অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব, স্থাপত্যশৈলী এবং মনোরম পরিবেশ একে দর্শনার্থীদের প্রিয় গন্তব্যে পরিণত করেছে।
ইসলামী স্থাপত্যের এই অপূর্ব নিদর্শনটি সংরক্ষণ এবং এর প্রচার-প্রসারে উদ্যোগী হওয়া আমাদের দায়িত্ব। এটি কেবল আমাদের ঐতিহ্যের অংশ নয়, বরং প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ইসলামী সংস্কৃতি ও স্থাপত্যশৈলীর সাক্ষ্য বহনকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন।
হিন্দা-কসবা শাহী জামে মসজিদ ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এক মিলনস্থল। এমন একটি স্থাপনা আমাদের জাতীয় গৌরব এবং ইসলামী স্থাপত্যের গর্বিত প্রতীক।
Leave a Reply