হোসেন আলী,বদরগঞ্জঃ
রংপুরের বদরগঞ্জে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৩হাজার ৪শ’ ৭৫হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হয়েছে। যা গতবছরের তুলনায় ৭৬৫হেক্টর বেশি। এখন মাঠে মাঠে চলছে পরিচর্যা। চাষীরা বলছেন, আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে আলুর বাম্পার ফলন হবে। একই কথা বলেছে উপজেলা কৃষি অফিস।
উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, গত মওসুমে বদরগঞ্জ উপজেলায় মোট ২ হাজার ৭১০ হেক্টর জমিতে আলুচাষ হয়েছে। গত মওসুমের অর্জনকে লক্ষ্যমাত্রা ধরে এবারের আলু মওসুম শুরু হয় কৃষি অফিসের। কিš‘ বাজারে আলুর অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় চাষীরা ব্যাপকহারে আলু রোপণ করতে থাকেন। একারণে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৩হাজার ৪৭৫ হেক্টর জমিতে আলুচাষ হয়েছে। যা’ গত মওসুমের তুলনায় ৭৬৫ হেক্টর বেশি। রোপণকৃত এসব আলুর মধ্যে উ”চ ফলনশীল(উফশী) ও ¯’ানীয় জাতের আলু রয়েছে।
সরেজমিন বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শণে দেখা গেছে মাঠে মাঠে চাষীরা আলুক্ষেতের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউবা গাছের গোড়ায় মাটি দি”েছন, কেউবা দি”েছন উপরি সেচ। আবার অনেকেই স্প্রে মেশিনের সাহায্যে বালাই নাশক স্প্রে করছেন। কথা হয় উপজেলার গোপিনাথপুর ইউনিয়নের মৌয়াগাছ এলাকার দক্ষিণপাড়ার চাষী রায়হান আলী(৩০)’র সাথে। তিনি দু’একর ৫০শতক জমিতে তিন জাতের ¯’ানীয় আলুর চাষ করেছেন। তার আলু গাছের বয়স দু’মাস ছুঁই ছুঁই করছে। তিনি বলেন, আর মাসখানেক পরই তার ক্ষেতের আলু ঘরে উঠবে। একারণে তিনি আগে ভাগেই গাছের গোড়ায় মাটি দেয়া ও সেচ দেয়ার কাজটি সেরে ফেলেছেন। তিনি বলেন, ক্ষেতে সেচ দেয়ার পর দু’ একটি গাছে গোড়াপঁচন রোগ ধরেছিল। কিš‘ বালাইনাশক স্প্রে করার পর তা’ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। বোর্ডহাট এলাকার কবিরাজপাড়ার চাষী তৌহিদুল ইসলাম(৩৪) দেড় একর জমিতে ¯’ানীয় জাতের আলু চাষ করেছেন। তবে তার ক্ষেতের বয়স এখনো দেড় মাস হয়নি। বুড়িরপুকুর এলাকার দক্ষিণপাড়ার আশরাফুল আলম(৪০) টিভিএস ও ¯’ানীয় জাতের আলুচাষ করেছেন। তবে একই এলাকার ওবায়দুল ইসলাম(৩৫) তিন একর জমিতে উ”চ ফলনশীল(উফশী) জাতের স্ট্যারিকস স্টিকস ও ¯’ানীয় জাতের আলুচাষ করেছেন। ওই এলাকার লিটন বাবু(৩০) প্রায় দু’ একর জমিতে ¯’ানীয় জাতের আলুচাষ করেছেন। ওই এলাকার চাষীরা জানিয়েছেন- বদরগঞ্জ, পার্বতীপুর ও সৈয়দপুর উপজেলার মানুষের চাহিদার কথা মাথায় রেখেই তারা আলুচাষ করেন। কারণ ওই তিন উপজেলার মানুষ ¯’ানীয় জাতের আলু পাছন্দ করেন। ফলে ¯’ানীয় জাতটিকে আলুচাষে প্রধান্য দেয়া হয়ে থাকে। এছাড়া ¯’ানীয় জাতের আলু চাষ করলে একই জমিতে তিনটি ফসল আবাদ করা যায়। চাষীরা আমন ধান কাটার সাথে সাথেই আলুচাষ করেন। আলু ঘরে উঠার পর সেই জমিতে বোরোচাষ হয়। আবার বোরো ধান কেটে সেখানে আমন চাষাবাদ করা হয়।
কথা হয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মহেববুল ইসলামের সাথে। তিনি বলেন, গোপিনাথপুর ইউনিয়নে দু’টি কৃষি বøক রয়েছে। এর মধ্যে হেলারচক বøকে গতবছর ৩৭০হেক্টর জমিতে আলুচাষ হয়েছিল। এবারে তা’ বেড়ে ৪২৫ হেক্টরে পৌঁছেছে। এছাড়া খিয়ারপাড়া বøকে গতবছর ১শ’ হেক্টর জমিতে আলুচাষ করেছিলেন চাষীরা। এবারে ১৫০ হেক্টর জমিতে আলুচাষ হয়েছে। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত আলুক্ষেতে তেমন কোন সমস্যা পরিলক্ষিত হয়নি। মাঝে মাঝে কোন ক্ষেতের দু’একটি গাছে গোড়া পচন দেখা দিয়েছিল। তবে সেটা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তিনি আরো বলেন, এখন পর্যন্ত বীজবাহিত সমস্যা ছাড়া আবহাওয়া জনিত কোন সমস্যার সৃষ্টি হয়নি।
উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা ফজলুল করিম বলেন, মাঠ পর্যায়ে দায়িত্বরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক আলুক্ষেত পর্যবেক্ষণ করছেন এবং চাষীদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দি”েছন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সেলিনা আফরোজ বলেন, আলুর বাজার মূল্য চড়া থাকার কারণে চাষীরা এবার আলুচাষে বেশি উৎসাহী হয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত ক্ষেতে কোন সমস্যা দেখা দেয়নি। শেষ পর্যন্ত এ অব¯’া বিরাজমান থাকলে আশা করা যেতে পারে আলুর ফলন ভালই হবে।##
Leave a Reply