ডেক্স রিপোর্ট:
জামিনে মুক্তি পেয়েছেন দৈনিক সংবাদ সারাবেলা পত্রিকার মাদারগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি হৃদয় হাসান ইকবাল। বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারী) দুপুর ১২ টায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ আদালতের সিনিয়র জেলা জজ বিচারক মোঃ শহিদুল ইসলাম তার জামিন মঞ্জুর করেন। এদিকে বৃহস্পতিবার বিকাল ৫ টায় ছাড়া পান হৃদয়। এর আগে ১১ ফেব্রুয়ারী দুপুরে হৃদয় হাসানকে ডেকে নিয়ে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দেয় বালিজুড়ী ইউনিয়ন শ্রমিক দলের আহবায়ক শরীফ উদ্দিন ও তার সহযোগীরা। অন্যদিকে এ ঘটনায় শরীফ উদ্দিন ও তার সহযোগীদের দ্রুত দলীয় পদ থেকে বহিষ্কারের দাবী জানান স্থানীয়া।
জানা যায়, গত ৯ তারিখ সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত মাদারগঞ্জ খাজা শাহ সূফী ইউনুস আলী ডিগ্রী কলেজের নির্বাচনী (টেষ্ট) পরীক্ষায় উপস্থিত থেকে পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে হৃদয় হাসান। কিন্তু শহরের চাঁদপুর এলাকার সমবারুর ছেলে ও ওয়ার্ড শ্রমিকলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শিমুল মোল্লা ১০ ফেব্রুয়ারী মাদারগঞ্জ থানায় ১৮৬০ পেনাল কোডের ৩৮৫/৫০৬/৩৪ ধারায় অভিযোগ দায়ের করান। রহস্যজনক কারনে অভিযোগ এর কোন তদন্ত না করেই অভিযোগটি আমলে নিয়ে থানায় মামলা নেন মাদারগঞ্জ থানা পুলিশ । মামলার পর বালিজুড়ী ইউনিয়ন শ্রমিক দলের আহবায়ক শরীফ উদ্দিন ও তার সহযোগীরা রাত থেকেই হৃদয়কে কল দিয়ে বার বার বাজারে যেতে বলে । এদিকে ১১ ফেব্রুয়ারী হৃদয় পরীক্ষা দিয়ে বাড়ী ফেরার পথে শরীফ উদ্দিনের ফোন পেয়ে তারতা পাড়া সকাল বাজার এলাকায় গেলে ১:৩০ মিনিটে হৃদয়কে পুলিশে ধরিয়ে দেয় শরীফ উদ্দিন। এ সময় এক এসআই ও পুলিশ সদস্য হৃদয়কে লাঞ্চিত করে থানায় নিয়ে গেলে তাকে দ্রুত আদালতে প্রেরণ করা হয় । সন্ধ্যায় ইউনিয়ন শ্রমিক দলের আহবায়ক শরীফ উদ্দিন উদ্দিন তার সহযোগীরা বাজার মিষ্টি মুখ করেন। তবে তদন্ত ছাড়াই মামলা নেওয়া ও হৃদয়কে গ্রেফতার নিয়ে জামালপুর জেলা ও মাদারগঞ্জ উপজেলায় কর্মরত সাংবাদিকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। সাংবাদিকরাও প্রতিবাদ জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় তুলেছিল । অন্যদিকে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও মুক্তির দাবীতে বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারী) দুপুর ১ টা ৩০ মিনিটে কলেজের প্রধাব সড়কে বিক্ষোভ মিছিল করে মাদারগঞ্জ খাজা শাহ সূফী ইউনুস আলী ডিগ্রী কলেজের শিক্ষার্থীরা । হৃদয়কে মুক্তি না দিলে আন্দোলনের ঘোষনা দিয়েছিলেন তারা।
খোজ নিয়ে জানা যায়, গত ৪ ফেব্রুয়ারী মাদারগঞ্জে সমবায় সমিতির গ্রাহকদের আমানতকৃত অর্থ ফেরতের দাবীতে অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে এক পুলিশ কর্মকর্তার অপসারণ চেয়ে লিফলেট তৈরি করে বিক্ষোভকারীরা । তাদের দাবীকৃত ছবিটি ফেসবুকে পোস্ট দেন সংবাদ সারাবেলা মাদারগঞ্জ প্রতিনিধি হৃদয় হাসান। অন্যদিকে ২০২২ – ২০২৩ অর্থ বছরের জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মানব সম্পদ বিভাগের মাদারগঞ্জ উপজেলার বালিজুড়ী ইউনিয়নের ৬৫ টি পরিবারের জন্য বিনামুল্যে ল্যাট্রিন বরাদ্ধ করে তালিকা করা হয় । সেই ৬৫ টি পরিবারের ল্যাট্রিনের কাজ তারা ঠিকাদারের কাছ থেকে কিনে নিয়ে ল্যাট্রিনের সরঞ্জাম আটকিয়ে বালিজুড়ী ইউনিয়নের তারতাপাড়া গ্রামের মরহুম রহিম উদ্দিনের ছেলে ইউনিয়নের শ্রমিকদলের আহবায়ক শরিফ উদ্দিন ও একই গ্রামের মরহুম লোকমান বগ এর ছেলে খাজা বগ তার সহযোগী হিসেবে প্রতিজনের থেকে ১০০০ আবার কারো কাছ ৩০০০ টাকা করে অর্থ আদায় করে প্রায় দের লক্ষাধিক টাকা তারা নিয়েছেন সুবিধাভোগোদের থেকে আদায় করে। এ নিয়ে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে শরীফ ও খাজা বগ সহ স্থানীয় আংশিক বিএনপির নেতাকর্মীরা হৃদয়ের ওপর ক্ষীপ্ত হয়ে উঠে এবং হৃদয়ের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র শুরু করে।
এদিকে খাজা শাহ সূফী ইউনুস আলী ডিগ্রী কলেজের উপাধ্যক্ষ সালেহ শাহ শফির জানান, মামলায় যে ঘটনার তারিখ দেখিয়েছে সেদিন হৃদয় কলেজের অনুষ্ঠিত তথ্য ও প্রযুক্তি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেছে। সকাল ১০ টা থেকেই দুপুর ১ পর্যন্ত পরীক্ষার হলেই ছিল। হৃদয়ের স্বভাব ও নৈতিক চরিত্র প্রশংসনীয়।
জামিন হয়ে হৃদয় হাসান সাংবাদিকদের জানান,আমি দেশবাসীর কাছে বিচার চাই। আমি আল্লাহর কাছে এর বিচার দিলাম।
এ বিষয়ে সংবাদ সারাবেলা পত্রিকার জামালপুর প্রতিনিধি মাসুদুর রহমান জানান, একজন সাংবাদিকের কাজ সমাজের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরা।সাংবাদিকতা পেশার মূল লক্ষ্য হলো- মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করা। সাধারণ মানুষের কথা বলা। মানুষের সমস্যা, সমাজের নানা অসঙ্গতি অনিয়ম অবিচার তুলে ধরা। কিছু পাওয়ার জন্য নয়, নিতান্ত ভালোবাসা ও জনসেবার মহৎ উদ্দেশ্য থেকে ঝুঁকিপূর্ণ এ পেশায় আসেন একজন প্রকৃত সাংবাদিক। একজন ভালো সাংবাদিককে যেমন সাহসী হতে হয় তেমনি সত্যনিষ্ঠ ও নীতির প্রশ্নে আপসহীন এবং ন্যায়ের প্রশ্নে অবিচল থাকতে হয়। ঝুঁকি থাকলেও অনেকেই ভালোবাসার কারণে এ পেশাকে বেছে নেন এবং আজীবন সাংবাদিকতায় সচ্ছ্বল থাকেন। তবে হৃদয়ের বিরুদ্ধে মামলাটা নেওয়ার পুর্বে তদন্ত করা প্রয়োজন ছিল। সে পরীক্ষার হলে থেকে কিভাবে শ্রমিক লীগ নেতার কাছে চাদা চাইল? অচিরেই মিথ্যা মামলা করার দায়ে শ্রমিকলীগ নেতাকে আইনের আওতায় আনা হোক।
এদিকে মামলার বাদী শিমুল মোল্লার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি মুঠোফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
অন্যদিকে মাদারগঞ্জ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ হাসান আল মামুন জানান, তার বিরুদ্ধে চাদাবাজির মামলা হওয়ায় পুলিশ গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করেছে।
মাসুদুর রহমান
০১৯৭৮৫০৫২৪৪
Leave a Reply